ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

প্রাদেশিক সরকার চায় জাপা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতির জন্য কলঙ্ক তিলক: এরশাদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১১
তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতির জন্য কলঙ্ক তিলক: এরশাদ

ঢাকা: প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নয় দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।



সাংবিধানিক পদসমূহে নিয়োগের বিষয়টি সংসদীয় কমিটি থেকে অনুমোদন করে নেওয়ার বিধান রাখার পক্ষেও মত দিয়েছে দলটি।

বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির সংসদীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে তাদের দেওয়া লিখিত প্রস্তাবগুলোই তুলে ধরেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

বৈঠকে এরশাদ তার প্রস্তাবে বলেন, ‘৭২ সালে যখন সংবিধান রচিত হয়েছিল তখনকার প্রেক্ষাপটে সাত কোটি মানুষের জন্য একটি এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা উপযুক্ত ছিল। তখন কিন্তু আমরা একটি ফেডারেল পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা থেকে এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছি। কারণ, তার আগে আমরা ওই জনসংখ্যা নিয়ে একটি প্রদেশেই বাস করতাম। এখন আমরা সেই একই আয়তনের ভূ-খন্ডের মধ্যে বসবাস করলেও আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে আরো ১০ কোটি। যা স্বল্প জনসংখ্যার প্রায় ৫০টা দেশের সমান। ’

তিনি বলেন, ‘জনগোষ্ঠীর জন্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রথম প্রয়োজন, তারপরে থাকে অঞ্চলের বিষয়টি। তাই বর্তমানে দেশের যা অবস্থা তাতে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনেই শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের প্রয়োজন। আর তার জন্যই দরকার সংবিধান সংশোধন করে এককেন্দ্রিক সরকারের বদলে ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। ’

তিনি বলেছেন, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা ও অষ্টম অনুচ্ছেদে ‘সর্বশক্তিমান আল¬াহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ অংশটুকু  বাদ দেওয়া যাবে না। কোরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থি কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবেনা। ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই ব্যবস্থাটি রাজনীতিবিদদের জন্য একটি কলঙ্ক তিলক। এই অপমানজনক ব্যবস্থাটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে। আমার একান্ত অপছন্দ থাকা সত্ত্বেও বিরাজমান নির্বাচন ব্যবস্থায় এটাকে এখনি আমি বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দিচ্ছিনা। তাহলে বিরোধী পক্ষের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকেই যাবে।
তাই বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা যদি বহাল রাখা হয় তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আরো কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আমার প্রন্তাব হচ্ছে বিচার বিভাগকে বিতর্কের উর্দ্ধে রাখার জন্য প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান উপদেষ্টা করার বিধান বাতিল করার সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন এবং সরকার গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। তবে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি রাখার প্রয়োজন হবে না। ’

এছাড়া এই বৈঠকে তিনি নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার ও ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাব

ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠকে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। রাষ্ট্র সবার ধর্ম যার যার। বিসমিল্লাহ সং্িবধানের বাইরের বিষয়। সংবিধান কোনো ধর্মগ্রস্থ নয় যে এতে এই শব্দটি রাখতে হবে।

তারা বলেন, সংবিধানে  আদিবাসি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমুহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

তারা ৩৩ অনুচ্ছেদের ৩ (খ), ৪,৫ ও ৬ উপ-অনুচ্ছেদের বিলুপ্ত করা এবং ধর্মভিক্তিক রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

বিশেষ কমিটির কাছে দেয়া প্রস্তাবে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা আরো বলেন, ১৪ দলের ২৩ দফা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক প্রধানসহ অন্যান্যদের নিয়োগের বেলায় জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ও একমত্যের ভিত্তিতে নিতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি প্রতিস্থাপন করতে হবে। সংখানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের শতকরা ৩৩ ভাগ নারী সদস্য হবেন এই বিধান যুক্ত করতে হবে।
সংরক্ষিত মহিলা আসন ১০০ এ উন্নীত করা এবং প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বানের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও প্রস্তাব দেন তারা।
 
সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সংবিধান কমিশনের প্রস্তাব দিয়ে ওয়ার্কাস পার্টির নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠোতে কোনো প্রকার সংশোধন, সংযোজন ও প্রতিস্থাপন করা যাবে না। জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান বাতিল স্থগিত কিংবা সামরিক শাসন জারির অপরাধে রাষ্টদ্রোহীতার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জাসদের প্রস্তাব

সংবিধান সংশোধনে ২৩ দফা প্রস্তাব দিয়ে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতৃবৃন্দ বলেন, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করতে হবে। সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকার কোনোভাবেই সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান বর্হিভূত যেকোনো কর্মকান্ড বা অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের অপরাধে সর্ব্বোচ শাস্তির বিধান চালু করতে হবে।

তারা বলেন, ৫২ (২) অনুচ্ছেদ করে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থার বদলে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

এছাড়াও তারা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ দলিলসমূহ সংবিধানে অন্তভর্’ক্ত করা, আদালত কোনো অসাংবিধানিক আইন ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের মার্জনা করার এখতিয়ার রাখবে না- এমন বিধান রাখার পক্ষে মত দেন।  

এছাড়া ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও গণতন্ত্রী পার্টি তাদের মতামত রেখেছে।

লিবাবেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) বৈঠকে অংশ নেয়নি।

বাংলাদেশ সময় ১৮৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।