ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সংঘাতের রাজনীতি আসন্ন!

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১১
সংঘাতের রাজনীতি আসন্ন!

ঢাকা: অস্থিরতা বাড়ছে রাজনীতিতে। একদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করানোর আওয়াজ, অপরদিকে সরকার পক্ষের রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র মোকাবেলার ধমক পরিস্থিতি অনেকটাই জটিল করে তুলেছে।

সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনীতিকদের কণ্ঠেও ধ্বণিত হচ্ছে সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কা। ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করানোর লক্ষ নিয়ে আগামী ৯ মে  আন্দোলনে নামছে বিএনপি। ওই দিন সারাদেশে বিক্ষোভ করবে তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠ গরম রাখার কৌশল নিয়েছে তারা।

সাম্প্রতিক কর্মকা- বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো বিএনপির সঙ্গে সরকার বিরোধী গাঁটছড়া বাঁধতে একপ্রকার মুখিয়েই আছে। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে জোরালো হচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর আন্দোলন।

আর ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত লাগায় ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সমর্থকরাও সরকার বিরোধী লাগাতার কর্মসূচির আওয়াজ দিচ্ছে। এরশাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২০ এপ্রিল বিজয় নগরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছে তারা। আওয়াজ দিয়েছে কঠোর কর্মসূচির।

আর সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতি ও নারী নীতি বাতিলের দাবিতে দেশ অচল করার হুমকিই দিয়ে বসেছে ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। তাদের সুরে সুর মিলিয়েছে ধর্মাশ্রয়ী আরো ক’টি সংগঠন।

সব মিলিয়ে আগামী মে মাসে রাজপথ আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বলে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক পরিম-লে। কারো কারো মুখে শোনা যাচ্ছে রাজপথে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলনের কথা বলছে, তারা দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ’

তিনি বলেন, ‘কেউ রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করলে সরকার অবশ্যই তা মোকাবেলা করবে। জনগণের জানমাল রক্ষা সরকারের দায়িত্ব। ’

বিরোধী দল দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে তার জবাব জনগণই দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। সরকার আমাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বাধা দিলে জনগণ অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এতে কোন খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারই দায়ী থাকবে। ’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে যাবে কি না তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। সরকার স্টিম রোলার চালালে জনগণ তার জবাব দেবে। ’

এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে একটি নির্বাচিত সরকার আছে। তাদের ভুল ক্রটি ধরিয়ে দেওয়া ভাল। তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয় যাতে আবার কোন অশুভ শক্তি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। ’

তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল যদি আন্দোলন করতে রাস্তায় নামে আর সরকার সেই আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করে তা হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। ’

ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর মুফতি ফজলুল হক আমিনী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। দাবি না মানলে দাবি আদায়ের জন্য কর্মসূচি পালন করবো। সরকার দেশকে খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেলে সেজন্য শেখ হাসিনাই দায়ী থাকবেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্যাতন চালালে জনগণ তো প্রতিরোধ গড়ে তুলবেই। তাতে দেশের পরিস্থিতি কি হবে তা জনগণ ভালো বলতে পারবে। ’

জামায়াতের প্রচার বিভাগের সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার যেভাবে নির্যাতনের মাত্রা বড়িয়ে দিচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে কি হবে তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। ’

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র ও দেশ রক্ষার লড়াই করছি। এ লড়াইয়ে কে জিতবে তা আন্দোলনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে। সরকার যদি চায় তাহলে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে যাবেই। ’

জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিরোধী দল যদি অযৌক্তিক আন্দোলন করে, সরকার তা দমনের চেষ্টা করবে। এতে রাজনৈতিক পরিবেশ বিঘিœত হবে। ’

তবে রাজপথ কাঁপানোর মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন সরকার বিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।