ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা

ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সুবিধাভোগীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১১
ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সুবিধাভোগীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে যারা সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকেও জনগণের আদালতে ও বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো হবে। ’  

শনিবার দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।



সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তারই সভাপতিত্বে শুরু হওয়া এ বৈঠকে ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য অংশ নেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অত্যাচার ও নীপিড়ন আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এখন শুধু প্রতিবাদ করলে চলবে না-জনগণকে সাথে নিয়ে সকল অন্যায়, অনাচার, অবিচার ও নীপিড়ন প্রতিরোধ করতে হবে। ’

‘দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বিদেশের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে যারা লাভবান হয়েছেন তাদের বিচার এদেশের মাটিতেই হবে’ বলেও ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

১৯৯৬ সালের মতো এবারও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ার মার্কেটে পরিকল্পিত লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। সরকারের মদদে ক্ষমতাবান ক’জন ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। এ ঘটনায় সরকারি দলের সমর্থকদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হলো। কিন্তু তাদের রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে অর্থমন্ত্রী তাদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানালেন। আদালত নির্দেশ দিলেও রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। ’

যারা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন শুধু তারাই নন- সরকারের মন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা  নেওয়ার দাবি জানান বিএনপি প্রধান।

শেয়ার কারসাজিতে সর্বস্ব হারানোদের ব্যাপারে মন্ত্রী উপদেষ্টাদের করা কটুক্তিরও তীব্র নিন্দা জানান তিনি।     

খালেদা জিয়া বলেন, ‘যে দলটি স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করে জনগণের কাছ থেকে জোর করে গণতান্ত্রিক, মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয় সেই দলটি দুর্ভাগ্যক্রমে এক অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত ও বেআইনি সরকারের যোগসাজসে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। তারা আবার জনগণের অধিকার হরণ শুরু করেছে। মানবাধিকার আজ ভুলুণ্ঠিত। জনগণের জানমাল ও জীবিকার নিশ্চয়তা নেই। ’

তিনি বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্দ্ধগতিতে জনগণ দিশেহারা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলে ২০০৬ সালের ১৭ টাকার চাল এখন ৪০ টাকায় কিনতে বাধ্য করাচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের কথা বলেছিলো। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। ’

‘বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কলকারাখানা ঠিকমতো চলছে না। আমাদের সরকারের সময় উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত শত শত শিল্প উৎপাদনে যেতে পারছে না। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় এই শহরে হাজার হাজার ফ্লাট বাড়ি বসবাসের উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও জনশূন্য হয়ে পড়ে আছে। ’

এসব বাস্তবতার আলোকে করণীয় নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বরাবরই দেশের ও জনগণের স্বার্থে আপোসহীন ভূমিকা পালন করেছে। ’

সমবেত নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং স্বনির্ভর এক মর্যাদাবান গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে দল গঠন করেছিলেন বর্তমানে আপনরাই তার মূল নেতা। দেশ ও জনগণের বিভিন্ন সংকট কালে আপনারা অনেকেই তার নেতৃত্বে কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে আমাকে উদার সহযোগিতা দিয়েছেন। ’

তিনি বলেন, ‘আজ দেশ ও জনগণ বিপন্ন-তাদের বাঁচাতে হবে। বরাবরই গণতন্ত্র সুরক্ষা ও জনগণের কল্যাণে বিএনপি আপোষহীন সংগ্রাম করেছে। আজ আবার বিপন্ন স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত জনগণকে  সাহস যোগানো এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে বিএনপির উপর। এ দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে যেকোনো মূল্যে, যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে। ’

দেশ ও জাতির দু:সময়ে আরো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘নিজেদের সব বিবাদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। দল, অঙ্গ দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু কোনো ক্রমেই যাতে তা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে পর্যবসিত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত এই আন্দোলনে দেশ প্রেমিক সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে পাশে নিতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-জনগণ বর্তমান সরকারের গণবিরোধী কর্মকা-ে অতিষ্ঠ। সরকার যে আসলে কোনো প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারবে না জনগণ সে সম্পর্কে নিশ্চিত। কাজেই দিন যত যাবে আন্দোলন তত জোরদার হবে। জনগণের অংশগ্রহণ তত বাড়বে। নিশ্চিত হবে আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।