ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

সরকার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ না করে নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১১
সরকার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ না করে নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে

ঢাকা: আওয়ামী লীগ নির্বাচনী মেনোফেস্টোতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। সরকার নির্বাচনী ওয়াদা তো পূরণ করেইনি বরং নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।



বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মামলায় আটক দলের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, সরকার ৭ হাজার মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে দেড় লাখ সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিয়ে দেশকে সন্ত্রসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে।  

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী মেনোফেস্টোতে গুরুত্ব সহকারে জনগণের সামনে কতগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ করা। দু:খের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সরকার নির্বাচনী ওয়াদা তো পালন করেইনি বরং নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টেও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী নব্য বাকশালী আওয়ামী সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে শুধু বিরোধী দলকে বিপর্যস্ত করার জন্য মিথ্যা মামলা করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৫ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সালাহউদ্দিন কাদেরের জীবন যখন সংকটাপন্ন তখন ১৯ এপ্রিল তাকে ট্রাইবুনালে হাজির করে রিমান্ড চাইলে তিনি গত ৪ মাসে তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন এবং জীবনহানির আশঙ্কা ট্রাইব্যুনালকে জানান। কিন্তু সরকারের তল্পিবাহক ট্রাইব্যুনাল তার আবেদনে কর্ণপাত না করে আওয়ামী সরকারের অত্যাধুনিক টর্চার সেল সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রহসনের বিচারের নামে সরকার নিজেই মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ করে চলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু ছাত্রজীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দিয়ে জেলে আটক রাখা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ.ন.ম এহছানুল হক মিলনকে শুধু আটকই রাখেনি, তার বাড়িঘর লুট করা হয়েছে। তিনি ২১টি মামলায় জামিন লাভ করার পর আবার ৫টি মামলা দিয়ে আটক রেখেছে। মিলনের মিথ্যা মামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান আজ দিশেহারা।

তিনি বলেন, পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরের হত্যাকা-ে আওয়ামী নেতাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা জনসমক্ষে প্রকাশ হওয়ার পরও সরকার গায়ের জোরে বিরোধী দলের ওপর দোষা চাপাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী ও তার ছেলেসহ যাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেল সেটিও সরকার গায়ের জোরে ধামা চাপা দিয়েছে। কিন্তু নাসির উদ্দিন পিন্টুকে বিদ্রোহীদের নৌকায় পার করার গায়েবী অভিযোগে দুবছর ধরে আটক রাখা হয়েছে। অমানসিক নির্যাতনে পিন্টুর দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে গেছে। তাকে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ওপরে মধ্যযুগীয় অত্যাচার চালানো হচ্ছে। তাকে দুনিয়া থেকে সরানোর চেষ্টা হতে পারে।

তিনি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুস সালাম পিন্টু, এহসানুল হক মিলন, লুৎফুজ্জামান বাবর, নাসির উদ্দিন পিন্টু, সুরাইয়া বেগমের নামে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন।

বিএনপির সময় র‌্যাব গঠন করা হয়েছিলো তাই র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা বিএনপির ওপর বর্তায় কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, আমাদের সময় র‌্যাব বা পুলিশের নামে এরকম নির্যাতনের কোনো নজির নেই।
 
সংবিধান সংশোধন কমিটির বৈঠকে যাবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে। সংবিধান সংশোধন কমিটিতে শরীক দল জামায়াতকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টিও স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।

আইনের দৃষ্টিতে সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধী।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ এস এম আবদুল হালিম, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad