ঢাকা: একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রায় সর্বস্তরেই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি গতানুগতিক কর্মসূচি ছাড়া দলের সাগঠনিক তৎপরতাও স্থবির হয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের ৭৩ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশেরই কমিটির মেয়াদ দীর্ঘ দিন হলো উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কমিটির মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অনেক আগেই ।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর সম্মেলন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। ক্ষমতায় আসার পর তৃণমুল পর্যায় থেকে সম্মেলনের ঘোষণা নিয়ে এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি দলটি ।
শুধু সম্মেলন প্রক্রিয়াই নয়, সাংগঠনিক কর্মকা-েও পিছিয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাংগঠনিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়েছে। গতানুগতিক কর্মসূচি ছাড়া সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে।
অপরদিকে দলীয় সংগঠনের পাশাপাশি ১৪ দল ও জোটকেও সক্রিয় করতে পারছে না। দীর্ঘ দিন পরে ১৪ দলের তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হলেও এ সভায় শরিক দলগুলোর প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিলের পর পরই পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন/পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা কমিটির সম্পন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হতে চলেছে এখনো ওয়ার্ড পর্যয়েই সম্মেলন শুরু করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই দলের অধিকাংশ জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু জেলা কমিটির মেয়াদ এক যুগের বেশী সময় পার হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলা ও মহানগর, পিরোজপুর, পটুয়াখলী, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট মহানগর ও সুনামগঞ্জ উল্লেখ্যযোগ্য।
সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা চলছে। এ সংগঠনগুলোর কোনো কোনোটির বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৭/৮ বছর আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
২০০০ সালের ১১ মার্চ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি যুবলীগ, এ বছরই ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগ, ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৯ জুলাই কৃষক লীগ, ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ যুব মহিলা লীগ, জুনে জাতীয় শ্রমিক লীগ, ৮ আগস্ট তাঁতী লীগ, ৫ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এবং ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে করতে পারেনি। এসব সংগঠনের নেতারা জানান, অনুকুল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশণা না আসায় সম্মেলন করা যাচ্ছে না।
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি আছে সুবিধাজনক সময়েই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা অনেক আগেই করে ফেলতে পারতাম বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পৌরসভা নির্বাচন সঙ্গত কারণেই দেরি হচ্ছে।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সম্মেলনের জন্য আমাদের সংগঠন প্রস্তুত্। আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা পেলেই সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
এদিকে সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগ স্থবির হয়ে আছে। জাতীয় ও দলের বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি (স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস) ছাড়া সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচি বা তৎপরতাও নেই।
গত ১৮ মার্চ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক জেলা সফর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এক মাসে ৭৩টি সাংগঠনিক জেলায় বর্ধিত সভা সম্পন্ন করার টার্গেট নিয়ে সফর কর্মসুচি শুরু করা হলেও ২০টির মতো জেলা সফর বাকি থাকতেই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে নতুন করে আরও কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি।
গত বছর জানুয়ারিতে শুরু হওয়া দলের সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানও গতি পায়নি। দলের প্রাণ কেন্দ্র ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এ সদস্য সংগ্রহ অভিযান এখনো শুরু করতে পারেনি। এ কর্মসূচি কবে শুরু করা হবে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কিছু বলতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও তিনি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং মহাজোটও সক্রিয় নয়। ১৪ দলের শরিকদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
শরিকদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৪ দলকে জেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করা, য্্ুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে জাতীয় কনভেনশনসহ জোটগতভাবে বিভাগীয় মহাসমাবেশ, আইন-শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে জোটের শরিকদের প্রতিনিধি রাখা, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে শরিকদের মতামত নেওয়া ইত্যাদি। প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে ১৪ দলের সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও গত ৬ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এসব বিষয়ে একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, দল পরিচালনা করার কেউ নেই, সবাই সরকার পরিচলনা করছে। ফলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিরোধী দলে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দল স্বক্রিয় ছিলো। ক্ষমতায় আসার পর দলের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এটাকে এখনই ঠিক করতে না পারলে দলকে বিপর্যয়ে পড়তে হবে। দীর্ঘ দিনের এ ঘাটতি একদিনে মেটানো সম্ভব হবে না। দলে বড় ধরণের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সংকট দেখা দেবে।
সাংগঠনিকসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, পর্যায়ক্রমে সব কাজই করা হব। এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। এ নির্বাচনের পর তৃণমুল পর্যায় থেকে সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। আগামী সপ্তাহে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হতে এ সভায় সকল বিষয়েই আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ সময় ২১২৫ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১১