রাঙামাটি: ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বসবাসরত সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি এবং অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে সংবিধানে। আদিবাসী কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী--যে নামেই হোক, বিষয়টির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীগুলোর বৃহত্তর সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক ও বিষু উপলক্ষে রাঙামাটিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি সব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার ৩ দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
দীপংকর তালুকদার তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী শিশুদের নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালায় শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। মহিলা ও শিশুদের শ্রমনীতিতেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ’
প্রতিমন্ত্রী উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে নামান্তরের বিষয়ে বলেন, ‘এখানে আদিবাসী শব্দটিও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ’
দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘আমরাও চাই সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত করতে। এ ব্যাপারে সংসদীয় বিশেষ কমিটির কাছে প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। তারই ভিত্তিতে সংবিধানে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচয় নিশ্চিত হবে। ’
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বৃহত্তর বাঙালি জাতির সবাইকে মিলেমিশে একযোগে এগিয়ে আসার আহবান জানান দীপংকর তালুকদার।
উল্লেখ্য বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু-২০১১ উপলক্ষে ‘দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ’ কর্মসূচির আওতায় ‘রাঙামাটি জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশ ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ উৎবের আয়োজন করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
উৎসব ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সংস্কৃতি বিষয়ক কমিটির আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- পুলিশ সুপার মাসুদ-উল হাসান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল আলম চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রুনেল চাকমা ও সাবেক পরিচালক সুগত চাকমা। এছাড়া জেলা পরিষদের সদস্য মিসেস শামীম রশিদ, বৃষকেতু চাকমা ও অংসুইপ্রু চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যায় আদিবাসী লোকজ সংস্কৃতি গেংখুলী গানের আয়োজন করা হয়।
মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী স্টল হিসেবে ঐতিহ্যবাহী পণ্য, খাবার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করবে। এছাড়া চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, খুমী ও খিয়াং নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর জীবনধারার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১১