ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

অসুস্থ মস্তিষ্কের সরকারপ্রধানের কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে : খালেদা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১১
অসুস্থ মস্তিষ্কের সরকারপ্রধানের কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে : খালেদা

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সংবিধানে আছে অসুস্থ মস্তিস্কের মানুষ সরকারপ্রধান হতে পারে না। বিএনপি ক্ষমতায়  গেলে অসুস্থ মস্তিষ্কের সরকারপ্রধানের সব কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে।

একই সঙ্গে অবৈধভাবে করা সব কর্মকাণ্ডকেও অবৈধ ঘোষণা করা হবে। ’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিচারের নামে প্রহসন ও বিনা বিচারে আটক রাখার আর এক জঘন্য ফাঁদ যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। এই ট্রাইবুন্যালের আইন, বিধি ব্যবস্থা তদন্ত ও গঠন প্রক্রিয়া কোনো কিছুই স্বচ্ছ কিংবা আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন নয়। আন্তর্জাতিক মহল থেকে সে কথা পরিস্কার বলে দেওয়া হচ্ছে। তবুও বর্তমান সরকার এই বিচারের নামে বিরোধী দল দমনের পথ বেছে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরাও চাই। কিন্তু আমরা বিচারের নামে প্রহসন করে বিরোধী দলকে দমনের অপচেষ্টার বিরোধী। সরকারি দলে অনেক চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। কাজেই যুদ্ধাপরাধের প্রকৃত বিচার করতে হলে তাদের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। ’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে আজ ন্যায়বিচারের কোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। উচ্চ আদালতে নগ্ন দলীয়করণ এবং সরকারের অসহনীয় হস্তক্ষেপে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এ সরকার দেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করছে। এতে করে দেশ আজ চরম সাংবিধানিক সংকটের মুখোমুখি। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে চাই কোন সংবিধানে দেশ চলছে? খসড়া কোনো সংবিধানে দেশ চলতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। তাদের অনুমোদন ছাড়া সংবিধান গৃহীত হতে পারে না। সংবিধানের মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটাতে হলে তার জন্য জনগণের সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে। ’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার, পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ কিংবা কোনো কমিটির ওপর সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি গ্রহণের বিধান প্রবর্তন করেছিলেন। এবার সে বিধান তুলে দেওয়া হচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ কিংবা কোনো কমিটির ওপর সে ক্ষমতা দেওয়া হলে সেটা আমরা মেনে নিতে পারি না। সংবিধান সংশোধনের নামে খসড়া সংবিধান রচনার মাধ্যমে দেশে আজ সাংবিধানিক সংকট ও শূন্যতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব কারণে সৃষ্টি হয়েছে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছি। এই দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে নানা অপকৌশলের মাধ্যমে বিচার অঙ্গনে সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আপনারা নির্বাচিত হওয়ায় সেই অপচেষ্টায় কিছুটা বাধা পড়েছে। এতে কিছুটা ভারসাম্য ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক স্থিতি আজ বিপন্ন, নাগরিকরা নিরাপত্তাহীন, সব প্রথা-প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে, অর্থনীতি স্থবির, উন্নয়ন-উৎপাদন বাধাগ্রস্ত। সন্ত্রাস ও কুশাসনে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। ঔদ্ধত্য, দখল, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, ও লুণ্ঠনে সমাজের প্রত্যেকে আতঙ্কিত, প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, নারীরা সম্ভ্রম হারাচ্ছে, মর্যাদাবানরা অপমানিত হচ্ছেন। শাসক দলের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই, সেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট দেশবাসী আজ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাবানদের চরম অসহিষ্ণুতা ও উস্কানিতে সভ্যতার দাবিকে অস্বীকার করে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ রীতি। সামাজিক সুবিচার, আইনের শাসন, সাম্য, গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রত্যাশা আজ সুদূরে মিলিয়ে গেছে। ’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘নৈরাজ্য বেশি দিন চলতে পারে না। আমরা যদি এই অন্যায়ের দৌরাত্মকে বেশি দিন মুখ বুঁজে সহ্য করি, এই অরাজকতাকে বেশি দিন চলতে দিই, তাহলে আমাদের কষ্টের সব অর্জন হারিয়ে যাবে। এই সমাজ বসবাসের উপযোগী থাকবে না। এই রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা হারিয়ে ফেলবো রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। আমরা জানি দুঃশাসন যে কোনো সমাজ ও দেশে অন্ধকার ডেকে আনে। সেই অন্ধকার আরও ভয়ংকর ও বিপদজনক হয়ে ওঠে যদি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে না ওঠে। সচেতন আইনজীবী সমাজ এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দালন গড়ে তুলবে। ’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত গতিতে চলছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে গুপ্তহত্যার মতো ভয়ংকর ঘটনাবলি। ’

বিএনপিনেত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ও স্বাধীনতার বুলি এখনো জরুরি অবস্থার আমলের মতোই এক মস্ত প্রহসনই রয়ে গেছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর জন্য কঠিন আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই। ’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট এবিএম নুরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, জামায়াতে ইসলামীর আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এই সরকারের ওপর দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সমস্যার কারণে মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। ’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের শেষ ভরসাস্থল হলো সুপ্রিম কোর্ট। ন্যায়বিচারের জন্য মানুষ সেখানে আশ্রয় নেয়। মানুষ যেন সেখানে ন্যায়বিচার পায় সেজন্য আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনকে দলীয়করণ করতে দেব না। সরকার সুপ্রিম কোর্টকে দলীয় অঙ্গ সংগঠন করতে চেয়েছিলো। ন্যায়বিচার রক্ষার স্বার্থে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব আমরা আন্দোলন করে যাবো। ’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বেগম খালেদা জিয়া।

গত ৩০-৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪ সদস্যের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত ফোরামের ১১ জন বিজয়ী হন। বিজয়ীরা হলেন- সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সহ-সভাপতি মো. আসাদ উল্লাহ, সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, কোষাধ্যক্ষ ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, সহ-সম্পাদক এএইচএম কামরুজ্জামান মামুন, সদস্য এএসএম মোক্তার কবির খান, মারজিনা রায়হান মদিনা, বেগম দেলোয়ারা হাবিব, এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, শওকত আরা বেগম দুলালী, ও মো. শহীদুল ইসলাম।  

এর মধ্যে নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি দেশের বাইরে থাকায় তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।

বাংলাদেশ সময় ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।