ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

ছাত্রলীগে তৃতীয় শক্তির উত্থান ॥ ৫ বছর কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে না

নিয়াজ জামান সজীব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১১
ছাত্রলীগে তৃতীয় শক্তির উত্থান ॥ ৫ বছর কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে না

ঢাকা: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন সহসাই হচ্ছেনা। প্রথা অনুযায়ী ছাত্রলীগের পূর্নমিলনী অনুষ্ঠাণে ঘোষণা করা হয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ।



এ বছর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারি বর্ণাঢ্যভাবে পালিত হয়। কিন্তু পূর্ণমিলনী এবার অনুষ্ঠিত  না হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে আকাঙ্খিত সম্মেলনের তারিখটি এখনো ঘোষণা হচ্ছে না। তাই দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠনটির কার্যক্রম অনেকটাই গতি হারিয়ে ফেলছে। এতে কেবল সংগঠনটির নেতারাই নন, সাধারণ কর্মীরাও দারুণ হতাশ।

ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত একজন সাবেক ছাত্রনেতার কারণে ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। তিনি তার নিজের এলাকার কাউকে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আনতে চান। কিন্তু, যোগ্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই সম্মেলন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগে নতুন ভাবে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটেছে। বৃহত্তর যশোর গ্রুপ নামের একটি গ্রুপ ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে গেছে।

ছাত্রলীগে এতদিন ফরিদপুর-বরিশাল নামের শক্তিশালী দুটি গ্রুপ থাকলেও নানা কারণে তারা পিছিয়ে পড়েছে। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে গত তিন বছরে বৃহত্তর যশোর এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে।

এই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মোমিন রূপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব নন্দীসহ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও হল পর্যায়ের একজন সভাপতি । আর এই গ্রুপের কর্মীদের দাবি অনুযায়ী তাদের পেছনে রয়েছেন ওই ছাত্রনেতা। তিনি রিপন-রোটন কমিটিকেও নেপথ্যে থেকে সাহায্য করছেন।

তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট এখনো পছন্দের প্রার্থী খুঁজে না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছেনা বলে জানালেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন সুজন ।

ছাত্রলীগের রিপন-রোটন কমিটি সংগঠনের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় পার করছে। আগামী এপ্রিলে এই কমিটি ৬ষ্ঠ বর্ষে পা রাখবে।

 ছাত্রলীগের গত কয়েকটি কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই নেতা-কর্মীদের রোষানলের শিকার না হয়ে পদ ছাড়েননি। তবে এবারে ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্যে তার লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। আর কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যেই তাদের কাছের লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছেন ২০১১ সালে কমিটি হওয়ার সম্ভাবণা নেই।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে এখনো বয়সের কোঠার বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। ২৯ বছর নাকি বয়সের সীমা থাকবেনা-এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই কারো কাছে।

সংগঠনটির সাংগঠনিক নেত্রীর পদ ছাড়ার পরও বিষয়টি নির্ধারণ করতে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাই ভরসা।

এফ রহমান হল ট্রাজিডির পর আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদককে (জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমেদ হোসেন,বি.এম. মোজাম্মেল হক) ছাত্রলীগের দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা টেন্ডারবাজ, অনুপ্রবেশকারীদের ৬৭ সদস্যের তালিকা সভানেত্রীর কাছে জমা দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায়।

অ্যাকশন গ্রহণ করার কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সম্মেলনের তারিখ যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে। ছাত্রলীগকে আরো গতিশীল করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেছেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। সবগুলো সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করার পর আমরা নেত্রীর দেওয়া দায়িত্ব তার  কাছে অর্পণ করব।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এখন দেশব্যাপী গণশিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার (১৮ মার্চ)  মাগুরায় জেলা পর্যায়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না হওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি বাংলানিউজকে বলেন, গঠণতন্ত্রে উল্লিখিত সময় মেনেই  ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়া উচিত। এতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার পথ সুগম হয়। আজকে যারা দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অনেকেই এই সংগঠনে নেতৃত্বের পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৬ এপ্রিল দুই বছর মেয়াদী ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ১৭ মার্চ, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।