ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

চট্টগ্রাম মহানগর আ’লীগ: কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব পেলেন তিন নেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১১
চট্টগ্রাম মহানগর আ’লীগ: কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব পেলেন তিন নেতা

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোন্দল স্থানীয়ভাবে নিরসনের জন্য তিন প্রবীণ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিবদমান নেতাদের সঙ্গে দ্রুত ঢাকায় বৈঠক করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।



শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে উত্তর, দণি ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা জানান।

মতবিনিময় সভায় বিবদমান দু’গ্রুপের দু’ নেতা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা.আফসারুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সার্কিট হাউস থেকে বের হয়ে দলীয় নেতারা সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে অবহিত করেন।

কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব পাওয়া তিন নেতা হলেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ইসহাক মিয়া, দণি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাংসদ আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

মহিউদ্দিনের অনুসারী নেতা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত বক্তব্যে তিন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছেন- আপনারা সিনিয়র নেতা। আপনারা স্থানীয়ভাবে দু’পরে সঙ্গে কথা বলে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করুন। আমিও ঢাকায় আলাদাভাবে নেতাদের নিয়ে বসবো। ’

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন চট্টগ্রাম আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। অতীতে স্বাধীনতার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব সংগ্রাম শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। আশা করব চট্টগ্রামের নেতারা ঐক্যবদ্ধ থেকে অতীতের সে ধারাবাহিকতা অুন্ন রাখবেন। ’

তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করে মহিউদ্দিন বিরোধী নেতা ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘তিন নেতা কি উদ্যোগ নেন সেটা দেখব। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী ডাকবেন বলেছেন। এসব উদ্যোগের আগে তো বিভক্তির সমাধান হয়েছে সেটা বলা যাবেনা। ’

সাবেক সাংসদ ইসহাক মিয়া বলেন, ‘প্রথমে আক্তারুজ্জামান বাবু ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সঙ্গে কথা বলব। এরপর দু’পরে নেতাদের দূরত্ব কমাতে যা করা প্রয়োজন সব করব। ’

চট্টগ্রামে শেখ মুজিব মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সার্কিট হাউসে এসে দুপুর আড়াইটায় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন শেখ হাসিনা। বেলা ৩টা ২১ মিনিট পর্যন্ত চলা এ সভায় চট্টগ্রামের তিনটি সাংগঠনিক কমিটির তিন সভাপতি আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মত বিনিময় সভা থেকে বেরিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

মত বিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরে আলম চৌধুরী লিটন এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনের দলীয় সাংসদ ও দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি তিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে মহিলা মেডিকেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সাংসদ নূরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই সাংসদ।

মত বিনিময় সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউস ছেড়ে যাবার আগে মূল প্রবেশ পথে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আফসারুল আমিনের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে পাল্টপাল্টি স্লোগান দেন।

এসময় মহিউদ্দিনের অনুসারীরা ‘ওয়ান ইলেভেনের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেয়।
অন্যদিকে আফসারুল আমিনের অনুসারীরা ‘যুদ্ধাপরাধীদের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেয়।

মতবিনিময় সভার সময় সাংসদ আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করেন। প্রধানমন্ত্রী নেতা-কর্মীদের নিয়ে মেজবানে অংশ নেন।

এ সভায় আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রায় দু’শ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য বিগত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আফসারুল আমিনের নেতৃত্বে বিবদমান দুটি ধারা আলাদাভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এরমধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু, সাংসদ এম এ লতিফ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আ জ ম নাছিরউদ্দিন সহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।

অন্যদিকে আফসারুল আমিনের পে আছেন সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং অর্থ সম্পাদক ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।