ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না: জলিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১
ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না: জলিল

ঢাকা: ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আব্দুল জলিল।

তিনি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।



রোববার ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আব্দুল জলিল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শুধু ধমক দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ডেকে এনে পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমানে সেটা হচ্ছে না। পরামর্শ না করে ধমক দেওয়া হচ্ছে।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জলিল বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আমি কোনও সমালোচনা করব না। তবে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। ধমক দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে এককভাবে কাজ করছে। একজনের সিদ্ধান্ত সব সময় সঠিক হয় না। দলীয়ভাবে আলোচনা করা উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। দলগতভাবে সকলের সঙ্গে আলোচনা করলে সুফল আসে। দলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রচেষ্টা নেই।

আব্দুল জলিল বলেন, শুধু এফবিসিআই’র সঙ্গে নয়, ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। আমি যখন বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম, তখন তাই করেছি। তোফায়েল আহমেদও করেছেন। আমি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বিভিন্ন সংগঠন ও সাংবাদিকদের পরামর্শ নিতাম।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল জলিল বলেন, দুই বছরে সরকার ব্যর্থ, তা বলব না। তবে পুরোপুরি সফলতার অভাব রয়েছে। কৃষি, শিাসহ বিভিন্ন েেত্র সরকারের সচল পদচারণা রয়েছে। সার সংকটের অলৌকিক সমাধান সম্ভব হয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সমস্যার সমাধান সরকার করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, তবে সরকার এ সঙ্কট কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে চেষ্টা সত্ত্বেও এসব সমস্যা উত্তরণ সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ-গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে পারলে সব ক্ষেত্রে সফলতা আসবে।

আগামী দেড় থেকে দু’ বছরের মধ্যে সরকার এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবে বলেও আশা করেন তিনি।

এ সময় আব্দুল জলিল গণতন্ত্রের স্বার্থে ১/১১’র পর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র হাতে নিজের নির্যাতনের তদন্ত দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘মতার বাইরে থেকেও ডিজিএফআই রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে, এজন্য সংসদীয় কমিটি গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমি একবার কথা বলে সমালোচিত হয়েছি। আবার বলতে গেলে দল থেকে বের হতে হবে। ’

দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আব্দুল জলিল।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দখল করে নিয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাবে সংসদকে ব্যবসায়ীরা রাজনীতি বিবর্জিত করে তুলেছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে ডাকসুর নির্বাচন হয় না। অথচ এখান থেকেই নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। তোফায়েল আহমেদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মতিয়া মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, আসম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুরসহ অনেকেই ডাকসু থেকে বেরিয়ে এসেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব উঠে আসতো। ’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকে দুর্নীতি ও অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকার মালিকরা নামের সঙ্গে সাবেক সাংসদ লেখার জন্য রাজনীতিতে আসছে। সমাজে রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য নির্বাচনে বিপুল অর্থ খরচ করে জয়লাভ করে। পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

এসব কারণেই রাজনীতিতে নেতৃত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে অভিমত দেন তিনি।

এ সময় তিনি সংসদে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণ জরুরি বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে প্রাণ নেই। সংসদে প্রাণ সঞ্চার করতে হলে সংসদ সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা কথা বলার অধিকার দিতে হবে। বিরোধী দল সংসদে না গেলেও সংসদ প্রাণবন্ত হতে পারে। আমরা আশা করি তারা সংসদে যাবে।

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলীয় কর্মকাণ্ড বাড়ানোর ওপরও জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, দলীয় কর্মকাণ্ড অনেক কমে গেছে। দল এবং সরকার সমন্বয় করে একসঙ্গে তৎপর হলে আমরা অভীষ্ট ল্েয পৌঁছুতে পারব।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল জলিল বলেন, যথাযথ উদ্যোগের অভাবে ১৪ দলে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে নির্বাচনে বিজয়ের পেছনে তাদের অবদান অনেক বেশি। কারণ ১৪ দল হঠাৎ করে হয়নি। একটি আস্থা-বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এ আদর্শিক জোট গড়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, আমরা যখন মহাজোট করি, তখন কোন দল ছোট আর কোন দল বড় দেখিনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাইকে গণ্য করেছি। আমরা মনে করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য সবার ভূমিকা সমান। আজকে ১৪ দলের মূল্যায়নের অভাব রয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে গুণগত পার্থক্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল জলিল বলেন, যখন একটা সরকার গঠন করা হয়, তখন দলীয় প্রধান মন্ত্রিসভা নির্বাচন করেন। কোথাও কোথাও দলের পরামর্শ নেওয়া হয়। আমাদের দেশে দলের পরামর্শ নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দলে অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ রয়েছেন। এটা ভেবে এবার প্রধানমন্ত্রী দলের নতুন প্রজন্মকে মন্ত্রিসভায় নিয়েছেন। এ মন্ত্রিসভা পুরোপুরি সফল বা ব্যর্থ হয়েছে তা বলব না। তবে প্রধানমন্ত্রী নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন। আসলে আমরা তো আর চিরদিন থাকব না।

মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা আমার বলা ঠিক হবে না। কারণ এতে অনেকে ভাববে আমাকে মন্ত্রী করা হয়নি তাই আমি বলছি। তবে একটা নড়াচড়া হওয়া দরকার।

অন্য এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, এখন কাগজ খুললেই ঢাকায় ৩/৪ টা খুনের নিউজ দেখতে পাই। অন্য সময়ে যে এটা হয়নি তা নয়। আগে এর থেকে বেশি হয়েছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদপে নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।