ঢাকা: সার্জেন্ট জহুরুল হকের শেষ চিকিৎসক কর্নেল (অব.) এমএম আলী যখন জহুরুল হকের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন চোখ বেয়ে জল ঝরছিলো অনেক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার।
এ দৃশ্য ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের।
আগরতলা মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে যে দশ জন জীবিত আছেন তাদের নয়জনই উপস্থিত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন। আর প্রয়াতদের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাদের স্বজনরা।
ডেপুটি স্পিকার ও আগরতলা মামলার ২৬ নম্বর অভিযুক্ত কর্নেল (অব.) শওকত আলী ছিলেন ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।
তিনি জানান, বস্তুত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব সেনানিবাস একসঙ্গে দখলে নিয়ে পাকিস্তানের সব সেনা ও শাসককে বন্দি করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিকল্পনা নেওয়া হয় আগরতলায় বসে। তাই আগরতলার ঘটনা মিথ্যা নয়। তবে স্বাধীনতাকামীদের ওই উদ্যোগ কিছুতেই ‘ষড়যন্ত্র’ হতে পারে না।
শওকত আলী আরো বলেন, ‘মামলাকে দীর্ঘায়িত করে দেশের মুক্তির সংগ্রাম এগিয়ে নিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও আইনজীবীদের পরামর্শে আমরা ট্রাইবুনালে শুনানি অস্বীকার করি। কিন্তু পাকিস্তানি প্রচার মাধ্যম এটাকে ষড়যন্ত্র অ্যাখ্যা দেয়। ’
ঐতিহাসিক আগরতলা মামলাকে ‘ষড়যন্ত্র মামলা’ না বলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ সত্য ইতিহাস জানুক। ’
তার বক্তব্যের আগে আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে জীবিত দশ জনের নয় জনই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন। এরা হলেন- ৫ নম্বর অভিযুক্ত নূর মোহাম্মদ, ৮ নম্বর অভিযুক্ত এবিএম আবদুস সামাদ, ১৮ নম্বর অভিযুক্ত এবি মো. খুরশিদ, ২২ নম্বর অভিযুক্ত মাহফুজুল বারী, ২৪ নম্বর অভিযুক্ত কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, ২৬ নম্বর অভিযুক্ত ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) এম শওকত আলী, ২৯ নম্বর অভিযুক্ত ফাইট সার্জেন্ট (অব.) আবদুল জলিল, ৩০ নম্বর অভিযুক্ত মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী ও ৩৪ নম্বর অভিযুক্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ। তবে জীবিতদের মধ্যে ৩৫ নম্বর অভিযুক্ত কমান্ডার আবদুর রউফ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
এছাড়া সার্জেন্ট জহুরুল হকের সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর ভাইঝি নাজনিন হক মিমি। আর প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মাননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান আয়োজকরা।
সম্মাননা প্রদান করেন প্রধান অতিথি ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। আর শওকত আলীকে সম্মাননা প্রদান করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
ড. আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত বিগ্রেডিয়ার (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমদ, নূর মোহাম্মদ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের চিকিৎসক কর্নেল (অব.) এমএম আলী, শহীদ জহুরুল হকের ভাইঝি নাজনিন হক মিমি। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জহুরুল হক হলের প্রাধ্য ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।
সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাইঝি নাজনিন হক মিমি তার চাচার জবানবন্দি উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমি সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের সাথে জড়িত। ’
কৌশলগত কারণে আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি পরে ওই ঘটনা অস্বীকার করতে রাজি হন বলে জানান মিমি।
তিনি বলেন, ‘তৎকালীন গণমাধ্যম এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চালিয়েছিল। আজ স্বাধীন দেশ থেকে গণমাধ্যমের সেই ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১