ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না: সরকারকে খালেদা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১১
কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না: সরকারকে খালেদা

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয়। মঈন-ফখরুদ্দিনের মত এ সরকারও অবৈধ।

একটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের মতায় বসানো হয়েছে। আজ না হোক, কাল না হোক একদিন এ সরকারের সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষিত হবে। এ সরকারকেই তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ’

ছাত্রদলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মহানগর নাট্যমঞ্চের উত্তর পাশের খোলা চত্বরে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

৫১ মিনিটের বক্তৃতায় বিএনপি প্রধান বলেন, ‘সরকার দেশকে অব্যাহতভাবে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ সরকারের বড় গুণ হচ্ছে মিথ্যা বলা। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি, এক থেকে জিরো নাম্বার পর্যন্ত সবাই মিথ্যা কথা বলায় অভ্যস্ত। কিন্তু বিএনপি যেটা পারে না সেটা বলে না। বিএনপি মিথ্যা বলতে পারে না। ’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। তার মন্ত্রীরা কাজ ও আইন বোঝেন না। তাই বিচারক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই পালন করছেন স্পিকার, প্রধান বিচারপতি আর  বিচারপতিদের দায়িত্ব। তিনি সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি দিতে পারছে না। উল্টো দেশবিরোধী চুক্তি করে জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্প আমাদের দেশে একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ খাতে প্রতিদিন বিশৃঙ্খলা চলছে। আর সরকার গার্মেন্টস শিল্পে নৈরাজ্যের পেছনে মদদ দিচ্ছে। বিএনপি মতায় থাকাকালে এ খাতের নৈরাজ্যে মদদ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছে তারা। ’

এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ সরকার দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। আর তাদের দুর্নীতির কথা বললেই একটির পর একটি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বলেছে, কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়। তারা প্রকাশ করেছে দেশের বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনই সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রধান দায়িত্ব নিয়ে বিচার বিভাগ পরিচালনা করছেন। তাহলে নিরপেতা থাকবে কি করে। উচ্চ আদালতে বসানো হয়েছে দলীয় লোকদের। ফলে জনগণ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার দেশ ধ্বংসের দায়িত্ব নিয়েছে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নয়, বিদেশিদের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে দিতেই সরকারকে বসানো হয়েছে। ’

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন,  বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এমন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন যে তারা সময়মত অফিসে যান না, কাজও  বোঝেন না। ’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় এসে যে চুক্তি করেছে তা বাস্তবায়ন করলে শুধু নামে  দেশ থাকবে, দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না। ’

সরকারকে অবৈধ সরকার আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার যখন থাকবে না তখন তাদের সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে এবং সব কিছুর হিসাব নেওয়া হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। দুর্নীতির রিপোর্ট কেন প্রকাশ করা হলো সেজন্য সরকার টিআইবি কমকর্তাদের উপর নাখোস হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার স্বৈরাচারের চেয়েও খারাপ সরকার। ’

সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ দিন দিন নয় আরো দিন আছে। ইনশাল্লাহ দিন আসবে। ’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার মতায় আসার পর থেকে কোন খাতে কি কি দুর্নীতি করেছে তার তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। একজনকেও ছাড় দেওয়া হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার সেনাবাহিনীসহ প্রতিখাতেই অন্যায়ভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যূত করেছে। সাড়ে চারশ’ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে। বিএনপি মতায় এলেই তাদের বকেয়া বেতনসহ চাকুরি ফেরত দেওয়া হবে। ’

তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে ফাইল নড়ে না। আর কাজের ব্যত্যয় হলে সরকার সেখানে বিএনপির ভূত দেখে। আসলে তারা যাদের প্রমোশন দিয়েছে তারা কাজ বোঝেন না। এমনকি তাদের মন্ত্রীরাও ঠিক সময়ে অফিস করেন না। তারা কিছুই বোঝেন না। যা বোঝানো হয় সেভাবেই কাজ করেন। আসলে এখন দেশ চালাচ্ছেন কয়েকজন উপদেষ্টা। ’

তিনি ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। ঐক্য-ঈমান ও শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কাজ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন কোন ভাইয়ের নামে স্লোগান দিলে হবে না। এমনকি সমাবেশে লোক সমাগম করলেই হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত ছাত্রদের সমন্বয়ে শিগগিরই সংগঠনের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। সবাইকে সেটা মেনে নিয়ে দলের জন্য কাজ করতে হবে। ’

মহাজোট সরকারকে মামলা ও ঝামেলাবাজ সরকার অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ সরকার আমাদের দলের বয়স্ক ও অসুস্থ মহাসচিবকেও মিথ্যা মামলা থেকে বাদ দেয়নি। ওয়ান ইলেভেনের বিপদের সময়েও মঈন-ফখরুদ্দিন সরকার তার মুখ বন্ধ রাখতে পারেনি। তাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে তা তিনি সফলভাবেই পালন করেছেন। এ জন্য তাকে সহ সাবেক স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলের নেতাকেও সম্মান জানাতে শেখেনি। স্পিকারের চিঠি নিয়ে গেলেও আমাদের নেতাদের বিমানবন্দরে ঢুকতে দেয়নি। স্পিকারের চিঠিকে পুলিশ অবজ্ঞা করেছে। তারা এ শক্তি কোথায় পেল। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ তো করতেই পারেনি উল্টো যে মিথ্যাচার করছে সময় এলে ইনশাল্লাাহ আমরা এর জবাব দেব। ’

খালেদা জিয়া বিকেল সোয়া তিনটার দিকে সমাবেশ স্থলে পৌঁছেন। এ সময় ছাত্রদল ও বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জিয়া, খালেদা ও তারেকের নামে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
 
এ পরিবেশে ৩২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর উপলক্ষে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও ছাত্রদলের পতাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়া।

এরপর বেলুন উড়িয়ে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সভা শুরু হয় বিকেল সাড়ে তিনটায়। শুরুতেই গত এক বছরে মৃত্যুবরণকারী ছাত্রদল নেতাদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের ছবি সম্মলিত পোস্টারে ও ফুলে শোভিত মঞ্চে শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব।

এদিকে দুপুর ১২টা থেকেই নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে শত শত ছাত্র মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হতে থাকেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।