ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

গোলাম মাওলাই ছিলেন হিযবুত তাহরীরের মূল নিয়ন্ত্রক

সাইদুর রহমান রিমন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১০
গোলাম মাওলাই ছিলেন হিযবুত তাহরীরের মূল নিয়ন্ত্রক

ঢাকা: নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের মূল নিয়ন্ত্রকই হচ্ছে গ্রেপ্তার হওয়া অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা। তিনিই বাংলাদেশে এ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন।

সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে যার ইমেজ গডফাদারের মতো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এ শিক্ষকের বিষয়ে গোয়েন্দা সূত্র বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে ঠিক এভাবেই জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদকে ‘মুখপাত্র’ করে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলেও সংগঠন চলতো গোলাম মাওলার নির্দেশেই।
 
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর বিভাগ) উপ-পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ড. গোলাম মাওলাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশ হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন।

গত মার্চে গোয়েন্দা পুলিশ মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) জিজ্ঞাসাবাদে মহিউদ্দিন আহমেদ নিজেদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা, কতিপয় জামায়াত নেতার সঙ্গে যোগাযোগ থাকা ও দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টির নানা ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য দেন বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা।

মহিউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. গোলাম মাওলা সম্পর্কেও এসময় গোয়েন্দা সদস্যদের বিভিন্ন তথ্য দেন।

এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে রিমান্ডে থাকা জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতার কাছ থেকেও ড. গোলাম মাওলা সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় বলে জানা গেছে।

শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ড. গোলাম মাওলা উত্তরা ও ধানমন্ডিতে একাধিক বৈঠক করে বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেন। তার নেতৃত্বেই ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ধানমন্ডির ৪/৩ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের শিক্ষক ড. নাসিমুল গণি, এজাজ আহমেদ (গ্রেপ্তারকৃত), শেখ মহিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ জন ব্যক্তিত্ব অংশ নেন।

গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, ২০০৪ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা কমিয়ে ১১ জন করা হয়। তবে এ বছর তিনজন নারী সদস্য নিয়ে তাদের বিভিন্ন গ্রুপের সমন্বয়কারী পদে বসানো হয়। তারা হচ্ছেন, খালেজার নার্গিস, জেলিফার আহমেদ ও নাদিয়া ইউসুফ। জঙ্গি গ্রুপের সমন্বয়কারী হিসেবে চিহ্নিত এই তিন নারী কমান্ডারকে গোয়েন্দারা এখনও খুঁজে পাননি বলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ড. গোলাম মাওলা এর আগে ২০০৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অপর ১০ সহযোগীসহ রাজশাহী সোনাদীঘি মোড়ের সিটি প্রেসকাবের নিচতলা থেকে গ্রেপ্তার হন। ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকার জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় বাংলাদেশের সংগঠনটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এর পরপরই এ জঙ্গি সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গা ঢাকা দেন।

শেখ মহিউদ্দিন ও এজাজ আহমেদসহ কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ায় সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় ড. গোলাম মাওলা সারাদেশে অতি গোপনে সংগঠনটি চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

উল্লেখ্য, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে উত্তরা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গত বৃহস্পতিবার ড. গোলাম মাওলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই মামলায় মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯ মার্চ।

মামলায় শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ ও ড. গোলাম মাওলাকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।

বাংলাদেশের সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।