ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সাকা চৌধুরী: বছর জুড়ে বাগাড়ম্বর বছর শেষে গ্রেপ্তার

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো চিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০
সাকা চৌধুরী: বছর জুড়ে বাগাড়ম্বর বছর শেষে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম: ‘আমাকে গ্রেপ্তার করা হলে চট্টগ্রামের মানুষ মেনে নেবে না। তখন তারা বিকল্প কোনো আন্দোলনে জড়িয়ে পড়তে পারে।

আশা করি সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেনা যাতে চট্টগ্রামবাসী নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রমাণ করার সুযোগ পায়। ’

গত ১৯ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রামের নিজ বাসভবন গুডস হিলে চোখেমুখে দম্ভ নিয়ে অনেকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে এসব কথা বলেছিলেন ’৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।

গুডস হিলের ফটকের সামনে এস আই পদমর্যাদার এক পুলিশ কমকর্তাকে দেখে এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীর সাইরেন শুনে এসময় তার মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্কই বিরাজ করছিল।

শুধু ওইদিন নয়, বছর জুড়েই গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকললেও বিএনপি’র এই নেতা মিডিয়ার সামনে ‘চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্নতা’ তত্ত্ব সহ নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন।

আওয়ামীলীগ সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতে, ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তারের পর সাকার এসব বক্তব্য নিছক বাগাড়ম্বর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হওয়া তো দূরের কথা, বিএনপি নেতাকর্মীরা পর্যন্তএ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজপথে নামেনি। শুধু চট্টগ্রামে দায়সারা গোছের একটি হরতাল দিয়ে প্রতিবাদের দায়িত্ব সেরেছে বিএনপি।

গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগের দিন চন্দনাইশ এলাকা থেকে গাড়ীর বহর নিয়ে ফেরার পথে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সিএমপির বাকলিয়া থানা পুলিশ নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে বিকেল থেকে আটকে রাখে। ওই সময়ও সাকা পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে ল্য করে তার স্বভাবজাত বক্তব্য রেখে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা চালান। অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা আটকে রাখার পর তাকে নগরীর কোতোয়ালী থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আর চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের মতে, চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্নতাসহ সাকা’র কথাগুলো ছিল নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য। এতে বিএনপির কোন দায় নেই। প্রশ্নবিদ্ধ ইমেজের কারণেই সাকা’র গ্রেপ্তারে জোরালো কোন আন্দোলন হয়নি বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।

এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ বিএনপির সামনে এখন অনেক ইস্যু। সালাউদ্দিন সাহেবের গ্রেপ্তারও একটা ইস্যু। এ ইস্যুতে চট্টগ্রামে হরতাল ডেকেছিলাম, সফল হয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক ইস্যুতে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। ’

‘চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্নতা’ তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তার একান্ত নিজস্ব বক্তব্য। এ ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নেই। ’

অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সাকা চৌধুরী বিরোধী হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীদের মতে, হরতাল ডেকে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে না পারার ব্যর্থতা একান্তই চট্টগ্রামের বিএনপি নেতৃত্বের। প্রশ্নবিদ্ধ ইমেজের নেতার জন্য হরতাল ডেকে আবার সেই হরতাল সফল করতে না পেরে দলকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

নোমান অনুসারী নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম স¤ক্সাদক এম এ সবুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঢাকায় বসে থাকলে কোন আন্দোলন সফল হবে না। রাজনৈতিক বক্তব্য অনেক দেওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যোগ্যতা থাকতে হয়। ’

এছাড়া বিভিন্ন মামলায় আদালতে হজিরা দিতে এসে কটামূলক, বিদ্বেষপূর্ণ নানা মন্তব্য করে মিডিয়ায় আলোচিত ছিলেন সাকা চৌধুরী।

চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনের আগে-পরে নির্বাচন কমিশনের মামলা দায়ের এবং ‘নির্বাচন কমিশন সতীত্ব হারিয়েছে’ বলে সাকার নানা বক্তব্য-বিবৃতি বিভিন্ন চট্টগ্রাম জুড়ে হাস্যরস ও ব্যাপক সমালোচনার জš§ দেয়।

বছর শেষে সাকা’র গ্রেপ্তার ও তার স্ত্রী, কন্যার প্রতিক্রিয়া-কান্না চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে সহানুভুতি-সমালোচনা উভয়েরই জš§ দিয়েছে।  

এছাড়া সাকা’র হাতে স্বজন হারানো রাউজানের প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো.জাহাঙ্গীরের প্রতিক্রিয়া চট্টগ্রামবাসীকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাকা কত নির্মম ভুমিকা পালন করেছিলেন। এমনটাই মনে করেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশ সময় ১৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।