ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

২০১০-এ চারদলীয় জোটের আলোচিত ১০

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০
২০১০-এ চারদলীয় জোটের আলোচিত ১০

ঢাকা: ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোটে নানামুখি সঙ্কটে পড়েছে। গত এক বছরে সে সঙ্কট থেকে খুব একটা বেরিয়ে আসতে পারেনি তারা।

বরং দলে ভাঙনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত থেকে রাজনৈতিক জীবনে নানারকম টানাপোড়েনে রয়েছেন। জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় দলটি সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে।  

গত এক বছরে চার দলীয় জোটের আলোচিত ১০টি বিষয় নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল-

১. সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়লেন খালেদা জিয়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ১৩ নভেম্বর সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের বাড়িতে ওঠেন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সরকার খালেদা জিয়াকে ওই বাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করেছে। মঈনুল রোডের ওই বাড়িতে খালেদা জিয়া ৪০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন।

২. সাকা চৌধুরী গ্রেপ্তার

অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাকা চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করারও অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরীকে গত ২৭ জুনের হরতাল চলাকালে গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের ৯৯ দিন পর গত ৪ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

৩. জামায়াতের শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার

এ বছরের ২৯ জুন বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে গেপ্তার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল  মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও  আব্দুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক মুজবুর রহমান, ঢাকা মহানগর জামায়াত ইসলামীর আমীর রফিকুল ইসলাম খান, রাজশাহী মহানগর জামায়াত আমীর আতাউর রহমান, খুলনা মহানগর জামায়াত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৪. নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা

এ বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে একাদিক মামলা হয় এবং গ্রেপ্তার হন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। এদের অনেকের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জয়নুল আবদীন ফারুক, মির্জা আব্বাস, আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে।

৫. চৌধুরী আলম নিখোঁজ

গত ২৫ জুন রাতে ৫৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন। তবে বিএনপির অভিযোগ চৌধুরী আলমকে অপহরণ করে গুম করা হয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সরকার বারবারই বলেছে, তাকে উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে দু’ পক্ষের টানা হ্যাঁচড়া হলেও বছর শেষেও চৌধুরী আলমের কোনও খোঁজ মেলেনি।

৬. নাটোরে বাবু হত্যাসহ আরও হত্যা

গত ৮ অক্টোবর নাটোরে বিএনপির মিছিলে হামলা চালায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় নিহত হন বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু। গত ৯ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহম্মদ হোসেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। গত ১১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের সয়েদাবাদে জেহাদ দিবস উপলক্ষে বিএনপির এক সমাবেশে ট্রেনে চাপা পড়ে বিএনপির ৬ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

৭. বিএনপির মহাসমাবেশ

রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচটি বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে প্রথম সমাবেশ করেন তিনি। এরপর গত ১৮ এপ্রিল খুলনায়, ৫ মে রাজশাহী, ১২ মে ও ১৯ মে ঢাকায় মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা। খুলনা ও রাজশাহীর মহাসমাবেশ চলাকালে পৃথক দু’টি ঘটনায় বিএনপির ৭ নেতা-কর্মী নিহত হন।

৮. হরতালের রাজনীতি শুরু

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে চার দলীয় জোট। প্রধান বিরোধী দল হিসাবে প্রথম বছরটি বিএনপি হরতালের রাজনীতি থেকে বিরত থাকলেও চলতি বছর তা থেকে আর দূরে থাকতে পারেনি। পুরো ২০১০ সালে তিনটি অর্ধ দিবস ও তিনটি পূর্ণদিবস হরতাল পালন করে দলটি।

তবে এসব হরতালের পেছনে জাতীয় কারণের চেয়ে দলীয় কারণই মুখ্য ছিল। খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সঙ্কট, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম অপহরণ, নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যা, ভারতের সঙ্গে করা ট্রানজিট চুক্তি বাতিলের দাবি ইত্যাদি।

৯. নাজমুল হুদা বহিষ্কার

গত ২১ নভেম্বর বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও দলের প্রতিষ্ঠাতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বক্তব্য দেওয়ার কারণে দলের স্থায়ী কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই দল থেকে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করা হয়।

১০. মান্নান ভূঁইয়া ও মীর শওকতের মৃত্যু

এ বছরই মারা যান বিএনপির বহিষ্কৃত মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। দলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান লে. জেনারেল মীর শওকত আলীও মারা যান ২০১০ এ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।