ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

কক্সবাজার-১ আসনে স্বামীকে ছাড়িয়েই খালাস হাসিনা

রহমান মাসুদ ও ইলিয়াস সরকার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৩
কক্সবাজার-১ আসনে স্বামীকে ছাড়িয়েই খালাস হাসিনা

কক্সবাজার থেকে: সাধারণত নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসিনা আহমদ ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে প্রথমে দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি স্বামীকে মুক্ত করবেন।

এরপর এলাকার উন্নয়ন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই ভোটারদের কাছে দেওয়া ‘স্বামীকে কারামুক্তির’ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন তিনি।

কিন্তু কক্সবাজার-১ ( চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের ভোটারদের কাছে দেওয়া এলাকার উন্নয়নের অন্যসব প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন বেমালুম। এলাকাবাসী হাসিনার এ ঘটনাকে নিয়ে নানা ব্যাঙ্গাত্মক কথা চালু করেছেন। এর একটি হলো- ‘স্বামীকে মুক্ত করেই খালাস হাসিনা’।

এই আসনের নির্বাচিত এমপি হাসিনা আহমেদের স্বামী সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় ১/১১ সরকারের দেওয়া দু্র্নীতি মামলায় জেলে ছিলেন।

ভোটাররা বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেন নি ভোটারদের মাঝে। বেশির ভাগ সময়ই স্বামীর পরামর্শে কাজ করেছেন তিনি। উপকূলীয় এলাকা হিসেবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছিটেফোটাও করেননি হাসিনা আহমেদ।

তবে এ কথা মানতে নারাজ বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য অনুসারে হাসিনা আহমদ এমপি হলেও এমপির ভূমিকায় রয়েছেন স্বামী। স্বামীর কথার বাইরে যান না তিনি। স্বামীর সঙ্গে আলাপ করে সব কাজ পরিচালনা করেন। ইতিমধ্যে সীমিত বরাদ্দ এবং ব্যক্তিগত ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি।   এরমধ্যে ব্রিজ, কালভার্ট, সড়ক ও বেড়ীবাঁধ সংস্কার অন্যতম।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জানান, একজন এমপির ভূমিকায় হাসিনা আহমদকে দেখা যায়নি। স্বামীকে নিয়ে তার ব্যস্ততা এবং সভা সমাবেশ। ফলে স্বাভাবিকভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এমপি হাসিনা।

তবে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি বাহাদুর শাহ জানান, বিরোধী দলের এমপি হিসেবে তাদের এমপি’র কাজ খুবই সীমিত। টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের সামান্য বরাদ্দ তার উন্নয়নে সীমাবদ্ধ। এতে যা করার প্রয়োজন ততটুকু তিনি করেছেন। আগামী নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন এবং তার স্ত্রী হাসিনা আহমদের বাইরে আর কোন প্রার্থী নেই বলেও জানান তিনি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের নির্বাচনে হাসিনা আহমদ (বিএনপি/ধানের শীষ), সালাহ উদ্দিন আহমদ (আওয়ামী লীগ/নৌকা), রফিকুল আহসান (স্বতন্ত্র/মই) ও মো. ইফতেখার উদ্দিন (স্বতন্ত্র/আম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তবে এবার আওয়ামী লীগে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, আশরাফুল ইসলাম সজীবসহ চিত্রতারকা নোবেল মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী। তবে কোনো কারণে সালাহ উদ্দিন আহমদ মনোনয়ন না পেলে তার স্ত্রী ও বর্তমান এমপি হাসিনা আহমেদই নির্বাচন করবেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা আসন থেকে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ আসনে গতবারের প্রার্থী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহকে প্রার্থী করা হতে পারে গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে। সে হিসেবে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী সালাহ উদ্দিন-হাসিনা দম্পতি।

আর জাতীয় পার্টি থেকে হাজী মো. ইলিয়াছ মনোনয়ন চাইবেন বলেও জানা গেছে।

বিএনপি নেতাদের অভিমত, গত নির্বাচনে কারাগারে বন্দি থাকার কারণে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারেননি। তাই তার স্ত্রী হাসিনা আহমদ নির্বাচন করেছেন। এতে হাসিনা নির্বাচিত হলেও কার্যত এমপির ভূমিকায় রয়েছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। স্ত্রীর সঙ্গে  তিনি এলাকায় রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিমত,  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি টানা ৩ বারের পরাজিত প্রার্থী। তাই তাকে দিয়ে এ আসন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। বরং নতুন প্রার্থীর প্রত্যাশা রয়েছে আওয়ামী লীগে। দলীয় কর্মীরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে চকরিয়ার জাফর আলম যোগ্য প্রার্থী।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি জানান, আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন। এক্ষেত্রে তিনি নির্বাচিত হবেন।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম জানিয়েছেন ইতোমধ্যে তার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও ইতোমধ্যে তাকে বিজয়ী করতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ভাবে তাকে গ্রীন সিগন্যালও দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমি চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর জন্য কাজ করতে চাই।

মনোনয়ন প্রত্যাশী বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাজ্য শাখার আইন বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন সবাই তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।

তবে তার মতে, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বিজয় আনতে তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে।

বেশিরভাগ সময়েই এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে মাহমুদুল করিম, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং ২০০৮ সালে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বিজয়ী হয়েছেন।
 
স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ শুধু ১৯৭৩ চকরিয়া-কুতুবদিয়া আসনে একবার জয়ী হয়েছিলেন। ওই সময়ে পেকুয়া উপজেলা হয়নি। ওই নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন ডা. শামশুদ্দিন আহমদ।

জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ সালে এবং জামায়াত ১৯৯১ সালে একবার করে এ আসনে জেতে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৩
আরএম/এমইএস/এনএ/জেডএম/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।