ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘এখনও গোলাম আযমই জামায়াতের মূল নিয়ন্ত্রক’

সাঈদুর রহমান রিমন<br> সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১০
‘এখনও গোলাম আযমই জামায়াতের মূল নিয়ন্ত্রক’

ঢাকা: এখনও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মূল নিয়ন্ত্রক গোলাম আযম। দলটির শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ কথা বলেন।



জিজ্ঞাসাবাদকারী দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা এ কথা জানান।

রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর আটকে রাস্তায় ভাংচুর ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ সময় নিজামী বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি শুধু একা দোষী হব কেন? আমাকে দোষী বানাতে চাইলে গোলাম আযম সাহেবকেও দোষী বানাতে হবে। ’

জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, ‘গোলাম আযম আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কোনো দায়িত্বে না থাকলেও তার নির্দেশ ছাড়া আমরা কেউ কিছু করি না। ’
 
কর্মকর্তারা নিজামীকে এ সময় জিজ্ঞেস করেন, ‘গাড়িবহর আটকে গাড়ি ভাংচুর চালানো ছাড়াও বড় ধরনের নাশকতা অথবা দেশজুড়ে অরাজকতা ছড়িয়ে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টির পরিকল্পনা আপনাদের ছিল কি?

জবাবে নিজামী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির গাড়িবহরে হামলা চালানোর বিন্দুমাত্র চিন্তা-ভাবনা আমাদের ছিল না। কর্মসূচি চলাকালে দৈবক্রমে রাষ্ট্রপতির গাড়ি পৌঁছে সেখানে আটকে যায়। এটা অবশ্যই অন্যায় হয়েছে। ’

এজন্য দলের এবং নিজের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন নিজামী।

পল্টন থানার ২০ নম্বর মামলায় তিন দিন রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে নিজামীকে চার সদস্যের কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই জামায়াত কর্মীদের বেপরোয়া হামলা-ভাংচুর ও পুলিশকে মারধোরের ভিডিওচিত্র দেখানো হয় তাকে।

গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, ২০ নম্বর মামলায় মুজাহিদ-সাঈদীর স্বীকারোক্তি ও বার বার দুঃখ প্রকাশের ভিডিও দৃশ্যটুকুও দেখানো হয়।

এসব দেখে নিজামী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হন।

এরপর জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা জামায়াতে ইসলামী ও গোলাম আযম প্রসঙ্গ নিয়ে নিজামীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

এসব প্রশ্নে নিজামীর বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্য বিরোধিতাকারী গোলাম আযম এখনো জামায়াতের মূল নিয়ন্ত্রক। জামায়াতের কোনো কমিটিতে না থাকলেও তার দিক নির্দেশনাতে এখনও জামায়াতের যাবতীয় কার্যক্রম চলে।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গোলাম আযমের প্রত্যক্ষ মদদে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সীমাহীন বর্বরতা চালায় এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর। যুদ্ধের শেষদিকে গোলাম আযম পাকিস্তানে গিয়ে সেদেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন।

১৯৭৮ সালের ২১ জুলাই পাকিস্তানি পাসপোর্টে অসুস্থ মাকে দেখতে বাংলাদেশে এসে আর পাকিস্তানে ফিরে যাননি। বরং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশেই রাজনীতি শুরু করেন।

১৯৯২ সালে জামায়াতের আমীর হিসেবে গোলাম আযমের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম-নিজামীদের বিচারের দাবিতে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির গণআন্দোলন।

১৯৯২ এর ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে গণআদালতে বিচার করা হয় যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দালালদের। বিএনপি সরকারের সময় আইনি মারপ্যাঁচে গোলাম আযম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান। ২০০০ সালে গোলাম আযম জামায়াতের আমীর পদ থেকে অবসরে যান।

নিজামীর দেওয়া বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, গোলাম আযম লোক-দেখানো অবসরে গেলেও জামায়াতের সব কার্যক্রমে কলকাঠি নাড়েন,গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দেন। ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানেও তাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

অথচ এতদিন ধরে জামায়াত নেতারা বলে আসছেন, গোলাম আযম এখন আর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন,বরং নামাজ রোজা আদায় আর বই লেখার কাজেই ব্যস্ত তিনি।

এদিকে, পল্টন থানার অন্য মামলায় মুজাহিদ-সাঈদীকে বুধবার মাঝরাতে জিজ্ঞাসাবাদ করায় বৃহস্পতিবার সকালে আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, সন্ধ্যায় মুজাহিদ-সাঈদীর জিজ্ঞাসাবাদ আবার শুরু হবে। অভিযোগগুলো স্বীকার করে নিয়েছেন শীর্ষ তিন জামায়াত নেতা। তাদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এরই মধ্যে গোয়েন্দা দল মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad