ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

খালেদার সম্পদের হিসাব তদন্ত করতে দুদকের প্রতি আ’লীগের আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১০
খালেদার সম্পদের হিসাব তদন্ত করতে দুদকের প্রতি আ’লীগের আহ্বান

ঢাকা: বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আয়ের উৎস এবং সম্পদের হিসাব তদন্ত করে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সেই সঙ্গে এই সংস্থাগুলোর কাছে খালেদা জিয়া যে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন সেই বিবরণীর সঙ্গে তার বিত্ত-বৈভব ও জীবনযাত্রা সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না তা মিলিয়ে দেখার জন্যও আহবান জানিয়েছে দলটি।



রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দুদক, ইসি ও এনবিআর এ সম্পদের যে বিবরণী জমা দিয়েছেন, সেই বিবরণীর সঙ্গে তার বিত্ত-বৈভবের মিল আছে কি-না সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।

এই সংস্থাগুলোকে আমরা পুনর্বার অনুরোধ জানাচ্ছি, খালেদা জিয়ার আয়ের উৎস, তার বিপুল সম্পদ এবং জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীর সঙ্গে তার জীবন ধারণের কী পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য।

তিনি আগামী ২৬ ডিসেম্বরের হরতাল প্রত্যখান করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে এ হরতাল ডাকা হয়েছে। বিএনপিও য্্ুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য এ হরতালে সমর্থন দিয়েছে। ’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘এই হরতালের মূল ব্যক্তি মওলানা মহিউদ্দিন একজন ঘৃণিত ব্যক্তি, রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী, ২১ আস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের সহযোগী। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য তারা হরতাল ডেকেছে। ’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির এতদিন লক্ষ্য ছিলো খালেদা জিয়ার বাড়ি রক্ষা, এখন বাড়ি পুনরুদ্ধার, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা। এ জন্যই বিএনপি এ হরতালের সমর্থন দিয়েছে। তাদের এ প্রয়াস ব্যর্থ হবে। জনগণ এ হরতালে সমর্থন দেবে না আমরা বিশ্বাস করি। ’

আশরাফ বিএনপিকে হরতালের সমর্থন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি খালেদা জিয়া ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে কী জিনিসপত্র স্থানান্তর করেছেন তার একটি তালিকা তুলে ধরেন।

আশরাফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ ছাড়া তথ্য দেননি। কখনো কোনো প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ ছাড়া তথ্য দেয় না। বিএনপির উচিত ছিলো শেখ হাসিনা যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা স্বীকার করে মেনে নেওয়া। ’

কারণ আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণ রয়েছে তিনি কী কী জিনিস নিয়ে গেছেন। উনার প্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ তথ্য প্রমাণ আছে। সালেহ আহমেদ স্বাক্ষর করে চিঠি পাঠিয়েছেন আরও কী কী নিতে চান। ’

সৈয়দ আশরাফ এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘যদিও এ বক্তব্য তার নয়, তিনি খালেদার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। উনি (দেলোয়ার) একজন প্রবীণ রাজনীতিক। ইদানিং তার হালহকিকত ভালো না। উনাকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন আছে। এ জন্য আরেকজনকে তৈরি করা হচ্ছে। এ কারণেই দেলোয়ার সাহেব খালেদা ও তার দুর্নীতিবাজ দুই পুত্রের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘দেলোয়ার সাহেব বঙ্গবন্ধুর আয় করের টিন নম্বর চেয়েছেন। দেলোয়ার সাহেব এবং খালেদা জিয়া জানেন না বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হন তখন টিন নম্বরের প্রচলন ছিলো না। বিএনপির মিথ্যাচার এমন অবস্থায় পৌছেছে যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও বিতর্কে নিয়ে আসছে। ’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘দেড়শ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দালান ছিলো। তার পিতা তাকে কলকাতায় লেখাপড়া করিয়েছেন। তিনি পাকিস্তান আমলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ঢাকা শাখার প্রধান ছিলেন। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। তিনি যখন মন্ত্রী তখন অনেকে ঢাকা আসার সুযোগও পাননি। ’

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সারা জীবন তিনি ত্যাগের রাজনীতি করেছেন। ক্ষমতার লোভে তিনি বিভোর ছিলেন না। তাকে হত্যার পর তার সম্পর্কে অনেক মিথ্যা তথ্য ছাড়ানো হয়েছে। তারপরও তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। ’

এক প্রশ্নের উত্তরে আশরাফ বলেন, ‘মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের এমপিরা আয়করের হিসাব রাজস্ব বিভাগের কাছে জমা দিয়েছে। রাজস্ব বিভাগ চাইলে তা প্রকাশ করতে পারে।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে সর্বৈব মিথ্যা, কল্পিত ও মনগড়া বক্তব্য রেখেছেন। বিএনপির এ ধরনের মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’

তিনি বলেন, ‘অকাট্য যুক্তি ও তথ্য প্রমাণ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিএনপিকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান করছি। বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিশ্বখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ও তার বাড়ি সুধাসদনকে নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।