ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

বই আর আড্ডায় কাটছে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের সময়

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১০
বই আর আড্ডায় কাটছে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের সময়

ঢাকা: বিশ্রাম, বই আর আড্ডায় সময় কাটছে ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সিনিয়র নেতাদের। দু’একজনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে সময় কাটানোর সুযোগ থাকলেও অধিকাংশেরই রাজনীতি একমাত্র পেশা হওয়া এখন অফুরন্ত অবসর তাদের।



এ অবসরে তারা বিশ্রাম-বই-আড্ডা ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ যেমন ঝালাই করে নিচ্ছেন, তেমনি বাড়ি বাড়ি বেড়িয়ে খুশি রাখছেন আত্মীয়-স্বজনদের।

প্রায় সব বহিষ্কৃত নেতাই মনে করছেন, বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে তাদের আবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে এ পর্যন্ত জনা এগারো নেতাকে বহিষ্কার করা হয় বিএনপি থেকে।

এদের মধ্যে তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-মহাসচিব মো. আশরাফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জহিরুল আমীন (জেডএ) খান ও সাংসদ জহিরুদ্দিন স্বপনকে বহিষ্কার করা হয় মাইনাস খালেদা ইস্যুতে দলের মধ্যে শুরু হওয়া সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে।

এরপর ঢাকা মহানগর বিএনপির কোন্দলে বহিষ্কার হন সাবেক এমপি সালাউদ্দিন। ছেলে ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তোলার পর বহিষ্কার হন শোকজের যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী।

সর্বশেষ দুই নেত্রীকে এক করার জনমত গঠন, কমিটি মনপুত না হওয়ায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে পদত্যাগ, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর প্রেস কনফারেন্সে খালেদা জিয়ার কান্নায় ভেঙে পড়া, ওই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঈদের মাত্র দু’দিন আগে হরতাল ঘোষণা ইত্যাদি ইস্যুতে সংগঠনবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় বহিষ্কার হন ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

এদের মধ্যে বহিষ্কার থাকা অবস্থায়ই সম্প্রতি মারা যান আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া। বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নেওয়া হয় মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সালাউদ্দিন আহমেদের। বাকিরা এখনো কাটাচ্ছেন বহিষ্কৃত জীবন।

সর্বশেষ বহিষ্কার হওয়া বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখন বেশির ভাগ সময়ই চেম্বারে থাকি। তাছাড়া বাসায় সময় দিচ্ছি। পড়াশুনা করছি। এলাকায় যাচ্ছি প্রতি শুক্রবার। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কথা হচ্ছে। এভাবেই এখন সময় কাটছে আমার। ’
 
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) ভুল বুঝিয়েছেন। তাই তিনি আমার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়েছেন। তবে এ সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। আশা করছি, ম্যাডাম আমার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করবেন। ’  

ছেলের অপরাধে বহিষ্কৃত বিএনপি স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এখন ঘুরি-খাই-ঘুমাই। আমি আমার পারিবারিক গণ্ডির মধ্যেই আছি। ’
 
সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৎকালীন যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার প্রফেশন রাজনীতি। আর কিছু করি না। আমার ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। ’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে নেই ঠিক, তবে এখনো রাজনীতি নিয়েই আছি। কি করা যায় এ নিয়েও চিন্তা করি। প্রতি মাসেই একবার এলাকায় যাই। সাধারণ মানুষকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নিই। আমি সব সময় জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করি বলে এ নিয়েই আছি। ’

একই অপরাধে বহিষ্কৃত বিএনপি চেয়ারপারসনের তৎকালীন উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেডএ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এখন পরিবারকে সময় দেই। বন্ধুবান্ধব আছে। তাদের সঙ্গেও বেড়াই। এছাড়া নানা কাজতো আছেই। তবে কি করা যায় চিন্তা করছি। কিছু করলে আপনারা দেখবেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।