ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপিতে ৩৩ বছরে ছয় মুক্তিযোদ্ধা মহাসচিব, চলতি দায়িত্বে আরো এক

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১১
বিএনপিতে ৩৩ বছরে ছয় মুক্তিযোদ্ধা মহাসচিব, চলতি দায়িত্বে আরো এক

ঢাকা: প্রায় ৩৩ বছর বয়স হল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির। মুক্তিযুদ্ধের   অন্যতম সেনাপতি জিয়াউর রহমানের হাতে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় জন মুক্তিযোদ্ধা দলটির মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সাংগঠনিক দায়িত্ব।

এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় (১৯৯৬-২০০৭) দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তীত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংস্কারপন্থি আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া। আর সবচেয়ে কম সময় দায়িত্বে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান (১৯৮৪-১৯৮৬)।

প্রতিষ্ঠালগ্নে অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যে দলের মহাসচিবের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন সেই পদে সম্প্রতি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলটির সপ্তম মহাসচিব হিসেবে এখনো নাম ঘোষণা করা না হলেও চিকিৎসার জন্য গত ২০ মার্চ সৌদি আরব যাওয়ার প্রাক্কালে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব পদে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে যান। এছাড়া বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল। ২০০৮ সালের ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে সিনিয়র য্গ্মু-মহাসচিব মনোনীত হওয়ার আগে থেকেই ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে পুর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মির্জা ফখরুল। ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এই মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপির মনোনয়নে দু’দফা সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। পালন করেন মন্ত্রীর দায়িত্বও।

এর আগে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন বিএনপি মহাসচিব। দলটির ৬ষ্ঠ মহাসচিব তিনি।

২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর  ভোরে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার প্রাক্কালে মহাসচিব পদ থেকে আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াকে বহিষ্কার করে  খোন্দকার দেলোয়ারকে দায়িত্ব দেন। গত ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পরও এই পদে কাউকে নিয়োগ বা দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত থাকেন দলীয় প্রধান। তাই মৃত্যুর পরও দিন চারেক মহাসচিব হিসেবে খোন্দকার দেলোয়ারের নামই ছিলো দলীয় নথিপত্রে।  

খোন্দকার দেলোয়ার ছিলেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা। করতেন ন্যাপের রাজনীতি। ১৯৭৮ সালে তিনি ন্যাপ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। পাঁচ দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

জাতীয় সংসদের চিপ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন একাধিক বার।

খোন্দকার দেলোয়ারের আগে বিএনপি মহাসচিব ছিলেন আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া। তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ জুন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বহিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত দলটির গুরত্বপূর্ণ এই পদটিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি।

মুুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মান্নান ভুঁইয়া স্বাধীনতা পূর্বকালে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৮১ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। প্রথমে কৃষক দলে, পরে মূল বিএনপিতে চলে আসেন সাবেক এই স্কুল শিক্ষক। বিএনপির হয়ে কয়েক দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন মান্নান ভুঁইয়া। ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে চার দলীয় জোট সরকার গঠনের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব  পালন করেন তিনি।

মান্নান ভুঁইয়ার আগে ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার ছিলেন বিএনপি মহাসচিব। ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দীর্ঘ দিন রোগে ভুগে মারা যান সালাম তালুকদার। একাধিক দফায় সাংসদ নির্বাচিত সালাম তালুকদার ১৯৯১ থেকে ‘৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই এ দলটিতে ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

সালাম তালুকদারের আগে কেএম ওবায়দুর রহমান ছিলেন বিএনপির তৃতীয় মহাসচিব। ১৯৮৬ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক।

স্বাধীনতার আগে ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু হয় কেএম ওবায়েদের রাজনৈতিক জীবন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কেএম ওবায়েদ।

এর আগে অবসর প্রাপ্ত কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন বিএনপির দ্বিতীয় মহাসচিব। ১৯৮৪ থেকে ’৮৬ সাল পর্যন্ত দলটির মহাসচিব ছিলেন তিনি। বিএনপির সূচনালগ্ন থেকেই দলটিতে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজ। বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।

কেএম ওবায়দুর রহমান বিএনপি ছাড়ার পর ১৯৮৮ সাল থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।  

ডা. একিউএম বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকারী এই বিএনপি নেতা ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুক্তিযোদ্ধা বি. চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।