ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

খালেদার বাড়ি: মোকাবেলার পন্থা নিয়ে দলে বিতর্ক, বিভেদ

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১০
খালেদার বাড়ি: মোকাবেলার পন্থা নিয়ে দলে বিতর্ক, বিভেদ

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপর্সন খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়ি হারানোর পর সরকারের সিদ্ধান্ত মোকাবেলার পন্থা নিয়ে খোদ দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে।

একপক্ষ বলছেন, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত।

অন্যপক্ষ বলছেন, যদি তারা আগেই জানতেন তাহলে কেন বললেন না! শুধু তাই নয় কারো কারো বক্তব্য পরোক্ষভাবে সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

তবে আইনী মাধ্যমই বিষয়টি সমাধান করার একমাত্র উপায় ছিল- এমনটিই বলছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা।

গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আইনী উপায়ে খালেদা জিয়ার বাড়ি ইস্যু মোকাবেলা করা ভুল ছিল মন্তব্য করে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সমালোচনা করেন। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ‘কথাযুদ্ধ’।

ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বাড়িটা নিয়ে নেবে। এটি ছিল তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাই আমার পরামর্শ ছিল রাজনৈতিক ভাবেই এটি মোকাবিলা করা। মওদুদ সাহেব যেহেতু পেশাগতভাবে আইনজীবী তাই তিনি চেয়েছিলেন, আইনী লড়াই। তার মতো ‘কালার ফুল’ রাজনীতি কেরিয়ার আমাদের কম আছে। ’

বিএনপির এই নেতা ব্যারিস্টার মওদুদের সমালোচনা করে আরও বলেছিলেন, ‘তড়িঘড়ি করে আদালতে না গিয়ে বাড়ি ছাড়ার নোটিসের জবাব দিলে অথবা নিম্ন আদালতে গেলে বিষয়টির সুরাহা হতে অনেক সময় লাগতো। তাহলে এখন তাকে বাড়ি ছাড়া হতে হতো না। কিন্তু এখন আর কিছুই সম্ভব নয়। ’

শুধু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেকেই সাকার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তবে তারা নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান। তবে বিপক্ষে কথা বলেছেন এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি বিএনপি ঠিক কাজই করেছে। কারণ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার উচিত যে কোন সমস্যা সমাধানে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার সমাধান করা এবং আইনী প্রক্রিয়া মেনে চলা। ’
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উস্কানীমূলক কথার কোনও দাম নেই। ’

রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা না করে আইনী ভাবে মোকাবিলা করা ঠিক ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার রফিক উল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কারণ আমি রাজনীতিও করি না আবার কেসও আমি ফাইল করি নি। যারা কেস করেছিল, তারাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। আমাকে শুনানির জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল, তাই আমি শুনানি করেছি। ’
 
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীরর করা মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘উনি মুখে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন। কারণ তিনি রাজনীতি করেন। আর খালেদা জিয়া এখন কেইসে হেরে গিয়েছেন, এখন অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। ’

অপরদিকে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাড়ির বিষয়ে যে রিটটি করেছিলেন, তাতে ৫ জনকে বিবাদি করেছিলেন তিনি। ৫ জনের একজন হচ্ছেন কেবিনেট সেক্রেটারি। আর কেবিনেট সেক্রেটারির আইনজীবী হলাম আমি। ’

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এখন এটা কী আমার বলা উচিত হবে, তিনি ভুল করেছেন নাকি সঠিক করেছেন। ’

একজন আইনজীবী হিসেবে কি মনে করেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সরকার আইনের মাধ্যমেই এগিয়েছে। সরকার আইন মেনেই নোটিস দিয়েছে। কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) বেআইনী কাজ করেছেন। বাড়ির লিজে যে চুক্তি ছিল তিনি সেটাও ভায়োলেট ( ভঙ্গ) করেছেন।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিম্ন আদালতে যান নাই কারণ সেখানে গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্থগিতাদেশ পাওয়া যেতো না। ওই চিন্তা ধারা থেকেই তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে  গেলে হয়তো সঠিক বিচার তারা পাবে। হাইকোর্ট যে এমনভাবে রায় দেবেন এটা হয়তো তারা ভাবতে পারেননি। নিম্ন আদালতে গেলে হয়তো তারা (সরকার) তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে যেতো তাই হাইকোর্টে যাওয়া। ’

খালেদা জিয়ার বাড়ি বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটাতো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার প্রশ্নই আসে না। সেটা শোভনও নয়। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেন সেনাবাহিনীর বাড়ি দখল করে রাখবেন। তিনি যদি আগেই বাড়িটি ছেড়ে দিতেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। তিনি অনেক প্রশংসাও পেতেন। ’   

অপরদিকে মামলার ফাইলিং ল’ইয়ার ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মামলা হেরে যাওয়ার পর সবাই একই কথা বলবে। আমরা আইনজীবীরাও এখন মনে করি, মামলা না করলেই হয়তো ভালো হতো। কিন্তু আমরাতো মামলা করেছিলাম বিচার পাওয়ার আশাতেই। এই মামলায় দেশের বড় বড় সব আইনজীবীরা সম্পৃক্ত ছিলেন। এই মামলা পরিচালানা করেছেন বিচারপতি টি এইচ খান। ব্যারিস্টার রফিক উল হক শুনানি করেছেন। সরকারতো এই মামলায় এতো ইঞ্জিনিয়ারিং করবে তাতো আমরা জানতাম না। ’

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মন্তব্য সর্ম্পক জানতে চাইলে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘সাকা যদি আগে থেকেই জানতেন, আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না, তাহলে কেন উনি খালেদা জিয়াকে এ কথা আগে বলেননি। কিংবা তার আইনজীবীদের বলেননি। সাকার এই বক্তব্য এখন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। সরকার এই বাড়ি নিয়ে যে অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, যে ষড়যন্ত্র করছে, সাকার বক্তব্যে মনে হচ্ছে তিনি সরকারের সেই অপব্যাখ্যাকে, ষড়যন্ত্রকে সমর্থন দিচ্ছেন। ’

অবশ্য এসব বিষয়ে কথা বলতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মওদুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে অসংখ্যবার মোবাইলফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। শেষমেশ শুক্রবার চারটায় তাকে পাওয়া গেলে তিনি শুধু বলেন, ‘আমি কিছু বলবো না, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেও রাজি নই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।