ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘সামরিক কায়দায় ক্ষমতায় এলেও আমরাই এদেশে গণতন্ত্র রক্ষা করেছিলাম। গণতন্ত্র ও সংবিধান সংরক্ষণের জন্যই সেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর করি।
জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখার উদ্যোগে ‘৬ ডিসেম্বর সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ পালন উপলক্ষে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সংবিধান সংরক্ষণ এবং সম্ভাব্য সংঘর্ষ থেকে দেশকে বাঁচাতে ৬ ডিসেম্বর (১৯৯০ সাল) ক্ষমতা হস্তান্তর করি। কিন্তু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অন্য দলের প্ররোচণায় আমাদের নির্বাচন ও সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। ’
তিনি বলেন, ‘আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়, এই বিশ্ব বেইমানের বিচার হয় না। ’
ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় গেলে এর বিচার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এরশাদ বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন আহমদের আইন বিষয়ে কোনও ডিগ্রি ছিল না। তবুও জ্যেষ্ঠতার বিচারে আমি তাকে প্রধান বিচারপতি বানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন করার। অথচ আমাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি। আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারি করে ১৮২টি জনসভা করতে দেওয়া হয়নি। সেদিন আমি নির্বাচন করতে পারলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। ’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন ১০/১২ জনকে ডিঙিয়ে জ্যেষ্ঠতা না মেনেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় থাকাকালে মাত্র ১৫ ছাত্র নিহত হয়েছিল। অথচ ’৯১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৪০ জন। এ তথ্যটি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। ওই ৪০ ছাত্রনেতার নাম আমরা জানি না কেন? নূর হোসেন চত্বর হয়, বসুনিয়া চত্বর হয়, ওদের নামে হয় না কেন?’
আইভি রহমান, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুকে গণতন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের অভিনব রূপ দেখতে পেয়েছি। গণতন্ত্র আমাদের দেখিয়েছে, কীভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের রাস্তার মধ্যে উলঙ্গ করা হয়, কীভাবে চলন্ত গাড়িতে আগুন ধরিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংবিধান রক্ষার জন্য স্বার্থ ত্যাগ করেছিলাম। সেই সংবিধানে যদি বিসমিল্লাহ না থাকে, শুক্রবার ছুটি না থাকে তা আমরা মেনে নেব না। ’
সাবেক এ সেনাশাসক দাবি করেন, জাতীয় পার্টি আবার এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার শক্তি অর্জন করেছে। দলটি তার লক্ষ্য অর্জনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
তিনি মহাজোটের নেতৃত্বদাতা আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমাদের ৪৮টি আসন দিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৮টি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আগামী নির্বাচনে তাদের এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ’
ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখার সভাপতি ফয়সল হোসেন চিশতীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য টি এম ফজলে রাব্বী, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী ফিরোজ রশীদ, মোস্তফা জামাল হায়দার, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী ও এস এম আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, ০৬ ডিসেম্বর, ২০১০