ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বহির্বিশ্বে সরকারের বিরুদ্ধে তারেকের নতুন ছক!

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১০
বহির্বিশ্বে সরকারের বিরুদ্ধে তারেকের নতুন ছক!

লন্ডন: সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙা করতে নতুন পরিকল্পনার ছক আঁটছেন লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেনানিবাসের বাড়ি ইস্যুতে আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে হেরে গেছেন তারা।

  তাছাড়া দেশে হরতালসহ কোনো আন্দোলন সফল হবে-- সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে সে সম্ভাবনাও নেই বললে চলে।   অগত্যা দূরে বসে তিনি নিজেই এবার সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করতে নতুন ছক আঁটবেন বলে স্থির করেছেন। একটি বিশ্বস্ত সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে একথা।

এ বিষয়ে এরই মধ্যে তারেক তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

সেনানিবাসের বাড়ির আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে দলীয় আইনজীবীদের ভূমিকায় প্রচণ্ড ুব্ধ তারেক। দেশে মায়ের পরামর্শদাতা দলীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান হয়ে উঠেছেন তিনি।

সম্প্রতি বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার, চারদলীয় জোটের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোর প্রথমটিতে জামাতকে আমন্ত্রণ না জানানো, মঈনুল রোডের বাড়ি ইস্যুতে ২৯ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে দলীয় আইনজীবীদের রহস্যজনক ভূমিকা -- ইত্যাদি বিষয় তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব বিষয়ে তার মা খালেদা জিয়ার পরামর্শক, দলীয় কোনো কোনো নেতা ও আইনজীবীদের আন্তরিকতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ ও অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে তার মনে। যুক্তরাজ্য বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ট ওই সূত্র বাংলানিউজকে আরও জানিয়েছে, মায়ের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারেক।

গত ২/৩ দিন ফোনালাপে এই উদ্বেগের কথা তিনি মায়ের কাছেও প্রকাশ করেছেন।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বহিষ্কার, ২৯ ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে দলীয় আইনজীবীদের রহস্যময় ভূমিকা ও চারদলীয় জোটের সাম্প্রতিক বৈঠকে জামাতকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ সম্পর্কে তিনি মায়ের কাছে জানতে চেয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংবাদ মাধ্যমের সামনে এত হাঁকডাক করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার পরও তা সফল হলো না , মাঠে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি আশানুরূপ হলো না, হরতাল সফল করতে জামায়াত সক্রিয় ভূমিকা রাখলো না এর---পেছনে দলের অভ্যন্তরীণ কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে মাকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

চারদলীয় জোটের সাম্প্রতিক প্রথম বৈঠকে জামায়াতকে আমন্ত্রণ না জানালেও খালেদা জিয়া পরের বৈঠক জামায়াতের সঙ্গে করেছেন তারেকের পরামর্শেই। বাংলানিউজকে এমনই জানায় সূত্র।

তারেক মনে করেন, যেভাবেই হোক আন্দোলনের মাঠে জামায়াতকে সঙ্গে রাখতে হবে। কারণ জামায়াতের সাংগঠনিক ও ক্যাডারভিত্তিক শক্তি আন্দোলন সফল করতে বড় ভুমিকা রাখবে বলে এ বিশ্বাস তার মনে দৃঢ়মূল।

ওই সূত্রের মতে সরকারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জামায়াতের রহস্যময় নীরবতা সম্পর্কে ঢাকা থেকে তারেককে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে জামাতের কোনো গোপন সমঝোতা হচ্ছে কি-না, এ নিয়ে সংশয়ে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা। দলের প থেকে এ বিষয়ে কড়া নজরও রাখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক হরতালগুলোতে মাঠে জামাতের অনুপস্থিতি সরকারের সঙ্গে কোনো গোপন সমঝোতারই ইঙ্গিত দেয় বলে তারেককে জানানো হয়েছে। তবে তারেক বলেছেন,   দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে।

এদিকে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাসেলস সফরের সময় বিএনপির ব্যাপক বিক্ষোভের সাফল্যে অনেকটা উজ্জীবিত তারেক এবার বহির্বিশ্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন বলে জানা গেছে। ওই বিক্ষোভের খবর রয়টারসহ বেলজিয়ামের সংবাদ মাধ্যম ও অন্যান্য বিদেশি মিডিয়ায় প্রচার পেয়েছে। তাই বহির্বিশ্বে ক্ষোভ বিক্ষোভে ছড়িয়ে, সরকারবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তারেক। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে বর্তমান সরকারের নেতিবাচক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরতে আগ্রহী তিনি। যাতে সরকার অন্তত ভাবমূর্তি-সংকটে পড়ে।

নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি ব্রিটেনসহ গোটা  ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যসব এলাকায় দলীয় শাখাগুলোকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই আন্দোলনে জামায়াত ও হিযবুত তাহরিরসহ অন্যান্য মৌলবাদী দলের সমর্থকদেরও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, বহির্বিশ্বে সরকারের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার জন্যে ঢাকা থেকে পাঠানো বিএনপির একটি প্রস্তাবও বিবেচনায় রেখেছেন তারেক।

সূত্রমতে, দলীয় আইনজীবীদের ভূমিকা যাই থাকুক, প্রধান বিচারপতিকে বিতর্কিত করাটা এ মুহূর্তে জরুরি। এটা করতে না পারলে তারেক কোকোসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দায়েরকৃত মামলায় আইনি লড়াইয়েও সফল হওয়া যাবে না--- ঢাকা থেকে এমনই একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে তারেককে।

বাংলানিউজের বিশ্বস্ত এই সূত্রটি আরও জানায়, বহির্বিশ্বে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে লন্ডন, ব্রাসেলসসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস, সংশ্লিষ্ট দেশের পার্লামেন্ট ভবন, জাতিসংঘ দপ্তর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির চিন্তা করছেন তারেক। আর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা বিদেশে যেখানেই আসবেন, সেখানেই বিক্ষোভ, করা হবে--এরকম  একটি পরিকল্পনাও বিবেচনায় রেখেছেন তিনি।

তাছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি পর্যায়েও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে লবি করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সার্বিক সমন্বয়ের জন্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি কমর উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আন্দোলন সফল করতে তহবিল সংগ্রহের জন্যে বিভিন্ন দেশে কর্মরত দলের শাখাগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বহির্বিশ্বে সম্ভাব্য এই আন্দোলন কর্মসূচির সত্যতা সম্পর্কে কমর উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাকে নতুন করে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের ভালো ও খারাপ দুটো দিক সম্পর্কেই বিশ্বসম্প্রাদায়কে জানানোর একটি দলীয় দায়িত্ব রয়েছে আমার ওপর। আমি এটিই চেষ্টা করছি। ’

এই আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা অবশ্য তিনি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান কোনো রাজনীতিতে নেই। দলীয় কর্মকাণ্ড বা আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গেও তার কোনো সম্পর্ক নেই। ’

তবে ‘বহির্বিশ্বে যে আন্দোলন করা হবে’ একথা স্বীকার করে নিয়ে কমর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে রার জন্যে এর বিকল্প নেই। বিদেশে বিএনপির শাখাগুলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রায় সব ধরনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। ’

আন্দোলনের দাবিগুলোতে খালেদা জিয়ার মঈনুল রোডের বাড়ি ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হবে কি-না, জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে কমর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি বরাদ্ধকৃত বাড়ি সরকার নিতেই পারে। আমাদের ইস্যুটি হলো, অসম্মানজনকভাবে আমাদের নেত্রীকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়টিও বিদেশিদের জানাতে চাই। ’

বহির্বিশ্বে বিএনপির সরকারবিরোধী নতুন এই আন্দোলন-পরিকল্পনা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরমুজ আলীর।   বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘যেকোনো আন্দোলনই রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। বহির্বিশ্বে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করবেন, দেশবাসীর কাছে তো নয়ই, বিদেশিদের কাছেও এ বিষয়ে তারা প্রশ্রয় পাবেন না বলেই আমার বিশ্বাস। ’’

হরমুজ আলী মনে করেন,যারা নিজ দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়, তারা আর যাই হোক দেশপ্রেমিক নয়--‘বিদেশিরা এ বিষয়টি ঠিকই বুঝতে পারবে বলে আমরা মনে করি। সুতরাং বহির্বিশ্বে বিএনপির আন্দোলন হুমকি নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিত নয়। বরং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের জন্যে বিএনপিকে করুণার পাত্র হিসেবেই দেখছে আমাদের দল। ’

বাংলাদেশ সময় : ২০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১১, ২০১০ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।