ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

গণআন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান খালেদার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১০
গণআন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান খালেদার

ঢাকা: সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের সমাপনী ভাষণে তিনি এ আহবান জানান।



আর বৈঠক শেষে চলে যাওয়ার পথে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রমজানের পর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় রাত ৯টা ৫১ মিনিটে।

বৈঠকে দলের প্রায় শতাধিক নেতা বক্তব্য রাখেন।

তবে বৈঠকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

সমাপনী বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সব মতবিরোধ ভুলে সংগঠন আরও শক্তিশালী করে সরকারের সব অপকর্ম ও অন্যায় বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে হবে। ’

সব নেতাকর্মীকে জনস্বার্থে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, দেশ ও জনগণকে ভালোবাসে না। ’

তিনি বলেন, ‘সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। জুলুম নির্যাতন আরও বাড়বে। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ’

এ সময় আওয়ামী লীগের সব অপকর্মের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তা জনগণের সামনে প্রকাশ করার আহবান জানান বিএনপি প্রধান।
খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘দলের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তি দিয়ে কেউ সুবিধা নেবেন তা ঠিক নয়। আগামীতে সাংগঠনিক কার্যক্রম মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের সমস্যার কথা শুনেছি। এগুলো সমাধান করা হবে। তবে মনে রাখতে হবে বিএনপি বড় দল। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা ভুলে যেতে হবে। ’

আগামী তিন মাসের মধ্যে সব জেলা-উপজেলার দলীয় অফিস নিয়ে কার্যক্রম চালানোর তাগিদ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন,‘প্রতি তিন মাস পর পর কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এ রিপোর্ট ও জরিপের ভিত্তিতে নেতৃত্ব ঠিক করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সমাপনী বক্তব্যের আগে সব ভেদাভেদ ভুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে দিনভর বৈঠক শেষ হয়।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী জেলা নেতাদের দলীয় কোন্দল অবিলম্বে মিটিয়ে ফেলার দাবির মুখে সবাই একযোগে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গিকার করেন।

বক্তারা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সুবিধাবাদী ও চাটুকারদের ব্যাপারে চেয়ারপারসনকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন তারা।

স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো নেতা পদ বাণিজ্যে জড়িত বলে অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খোন্দকার।

আর খালেদা জিয়াকে সপ্তাহে অন্তত এক দিন ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রাখার অনুরোধ জানান সাভারের মিজান।

তিনি বলেন, ‘চাটুকারদের জন্য আমরা আপনার (খালেদা) কাছে যেতে পারিনা। প্রয়োজনে আপনি আলাদা ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) রেখে সপ্তাহে এক দিন আপনার সঙ্গে দেখা করার ব্যাবস্থা রাখুন। ’

ফরিদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি মো.শাহজাদা মিয়া বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। তারেক রহমান আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা। কিন্তু দলের ভেতর একটি ‘ভাইয়া গ্রুপ’ সৃষ্টি হয়েছে। এই ‘ভাইয়া গ্রুপই’ তারেক রহমানের বিপদের কারণ। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘গুলশান অফিসে যারা থাকেন তাদেরকে ঠিক মতো সালাম-কালাম না দিলে দলে পদ পাওয়া মুশকিল। আবার এলাকায় সময় না দিলে ভোট পাওয়া অসম্ভব। আমরা পড়েছি উভয় সঙ্কটে। ’

মাদারিপুর জেলা বিএনপি সভাপতি আবু বকর আগামী ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানান ।

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গউস সংগঠন গোছানোর পর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের আনার ব্যাপারে মত দেন।

নির্বাহী কমিটি সদস্য রেহেনা আক্তার রানু এমপি বলেন, ‘টাকার জোরে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেও পরিশ্রমী অনেক নেতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। ’

জেলা নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্বাভাবিভাবেই রাজধানী ঢাকায় যারা থাকেন তারা একটু বেশি সুযোগ-সুবিধা পান। এটি ব্যতিক্রম কিছু নয়। ’

নির্বাহী কমিটি সদস্য মীর শরাফত আলী সপু বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতাদের তদবিরের কারণে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সিনিয়র নেতাদের বাজার-ঘাট করে দেয় এমন অনেককেই কমিটিতে রাখার তদবির আমাদের কাছে আসছে। ’

এছাড়া বৈঠকে বরিশালের মুজিবুর রহমান সরোয়ার, আজিজুল হক আব্বাস, নোয়াখালীর মোহাম্মদ শাজাহান, লক্ষিপুরের শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কুষ্টিয়ার সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, ফরিদপুরের শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, টাঙ্গাইলের অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, মাদারিপুরের হেলেন জেরিন খান, মেহেরপুরের আমজাদ হোসেন, সাভারের মিজান রানা, নেত্রকোনার নুরুজ্জামান, ফেনীর শহিদুজ্জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সৈয়দা আশিফা আশফিয়া পাপিয়া, বাগেরহাটের আব্দুস সালাম, বগুড়ার সাইফুল ইসলাম, ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, ‘দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। এ মতবিরোধ প্রায় সময়ই প্রকাশ্যে চলে আসে। এছাড়া ছাত্রদল ও যুবদলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। জেলা ও বিভাগীয় কমিটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়নের অভাব রয়েছে। এসব বিরোধ মিটিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী না করতে পারলে সরকারবিরোধী কর্মসূচি সফল করা সহজ হবে না। ’

এছাড়া তোষামোদকারী ও চাটুকাররা চেয়ারপারসনকে ঘিরে রেখে ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।

দলে আসা নতুন মানুষকে দলীয় নেতৃত্বে বসানোর ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ‘তারা (নতুনরা) দলের তেমন কাজে আসেন না। নিজ এলাকার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ থাকে না। তারা রাজধানীতে থেকে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন হয়। ’

সকালের অধিবেশনের প্রথম বক্তা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংগঠন আরও জোরদার করতে খালেদা জিয়াকে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কমিয়ে আনতে ম্যাডামের (খালেদা) হস্তক্ষেপ
প্রয়োজন। ’

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একটি চক্র আছে। ওই চক্র চেয়ারপারসনের সঙ্গে ত্যাগী নেতাকর্মীদের দেখা করতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ চক্র ভাঙ্গতে হবে। ’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ বলেন, ‘বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তাদের জন্য সঠিক নির্দেশনা প্রয়োজন। এছাড়া ত্যাগী নেতাদের সাংগঠনিক দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিৎ। ’

বৈঠকের সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও দাবি জানান তারা।

তবে শেষ পর্যন্ত সভাতে কঠোর কোনো কর্মসূচি ঘোষণার আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে দলকে আরও সংগঠিত করার অঙ্গিকার সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad