ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যাটনমেন্টের বাড়ি নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। খালেদা জিয়াকে ক্যানমেন্টের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকে দেশজুড়ে পূর্ণদিবস হরতালও পালিত হয়েছে।
তবে বসে নেই মহাজোট সরকার। বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে।
প্রশাসনিকভাবে বিএনপিকে রাজপথে মোকাবেলার জন্য সরকার প্রস্তুত বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের বাড়ি রক্ষার আন্দোলনের মধ্যে বিএনপিকে ঠেলে দিতে আওয়ামী লীগ আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করলেও রায় স্থগিতের কোনো আবেদন করেনি। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে সরকার।
তাছাড়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে খালেদাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা না হলে আগামীতে তারেক রহমানসহ খালেদার নাতি-নাতনি বা বংশ পরস্পরায় ক্যান্টনমেন্টের এই বাড়িতে বসে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন- এমন শংকাও ছিল সরকারের মধ্যে। ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনীতি বন্ধ করতেই এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার বিএনপি মহাসচিব খোন্দাকার দেলোয়ার হোসেন ঈদের পর সরকার পতন আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার বাড়িকে ইস্যু করে তারা লাগাতার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, আন্দোলনকে বেগবান করতে বিএনপির সকল সংসদ সদস্য এক যোগে সংসদ থেকে পদত্যাগের চিন্তাভাবনাও করছেন। সংসদের আগামী অধিবেশনেও তাদের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার পথে না হেঁটে প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলার কৌশল নিয়েছে সরকার। এমনকি বিরোধী দল যদি সংসদ থেকে পদত্যাগ করে এতে সরকার কোনো দ্বিধা বা কালক্ষেপন না করে শূন্য আসনগুলোতে দ্রুতই উপনির্বাচন দিয়ে দেবে বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের অপর একটি সূত্র জানায়, বিএনপি এরই মধ্যেই রাজনৈতিক কৌশলে হেরে গেছে। ঈদের দুই দিন আগে হরতাল দেওয়ায় জনগণও ক্ষুব্ধ হয়েছে। একই দাবিতে পুনরায় হরতাল দিলে জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়বে বলে মনে করছে দল।
বিএনপির সরকার পতন আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, পৃথিবীর কোথাও কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষার কোনো আন্দোলনে অংশ নেয়নি। আমরা কচুর পাতার পানি না যে, তাদের আন্দোলনে ভেসে যাবো।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন তারা করতে পারবে না। কিছু সন্ত্রাস করতে পারবে। তা যদি করে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা তো জনগণের সম্পদ, নিরাপত্তা নষ্ট হতে দিতে পারি না।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারি মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময়ই বলছি বিরোধী দল গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু গণতান্ত্রিক সমরকারকে উৎখাতের হুমকি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি এবং উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অপতৎপরতা চললে সরকার কিংবা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপটেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে বিএনপির কি স্বার্থ থাকতে পারে? এর সঙ্গে জাতির কি স্বার্থ জড়িত আছে? খালেদা জিয়ার বাড়ি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে জাতির বা জনগণের প্রাপ্তি কি?
তিনি আরও বলেন, তারা কিসের আন্দোলন করছে? খালেদার বাড়ি তো কোনো জাতীয় ইস্যু না। এই বাড়ির সঙ্গে ব্যক্তি খালেদার স্বার্থ জড়িত। খালেদা জিয়া বিএনপির সভাপতি বা একজন কর্মকর্তা মাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১০