ঢাকা: দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সময় পার করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কষ্টের অন্ত নেই বিএনপি নেত্রীর আত্মীয় স্বজন ও দলের নেতা কর্মী এবং সমর্থকদের মনেও।
সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়িটিতে প্রায় ৪০ বছরের স্মৃতি পেছনে ফেলে খালেদা জিয়া শনিবার বিকেলে সরাসরি গুলশান অফিসে যান। রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে চাপা কষ্ট আর ধরে রাখতে পারেননি জীবনের অনেক চড়াই উতরাই পার হওয়া বজ্রকঠিন এই মানুষটি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তার চোখের পানি ও কান্না দেখে কান্না ছড়িয়ে পড়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।
একটি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে বাড়িছাড়া করা অনেকের মনে বেজেছে স্বজন হারানোর কষ্টের মতো। তারা একে নিষ্ঠুর আচরণ বলতেও ছাড়েননি।
খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করার ইস্যুতেই রোববার হরতাল হয়। হরতাল চলাকালে পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে নেতাকর্মীদের কথায় ছিল বেদনা আর ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। হরতাল পালন করেও সাধারণ নেতাকর্মীদের ক্ষোভের উপশম খুব একটা হয়নি। রোববার সন্ধ্যার পর নেতাকর্মীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে তেমন আভাসই পাওয়া গেছে। তাদের মনে এখন আগুন জ্বলছে। তারা এই অন্যায় আচরণের বদলা নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
আর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও খালেদার ছোট ভাই শামিম ইস্কান্দারের বাড়িটি যেন ডুবে ছিল গভীর দু:খে। বাড়ি দুটি ছিল নিরব নিস্তব্ধ। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি দুটিতে কারো আনাগোনা চোখে পড়েনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি দু:খজনক এবং ব্যথিত করার মতো। সরকার এমন ঘটনা ঘটাবে আমরা কখনও ভাবিনি। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সরকারের দেওয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য সরকারের এমন নিষ্ঠুর আচরণ নজিরবিহীন। এই সরকারের পক্ষে যেকোনো কিছুই করা সম্ভব। গত ২২ মাসের কর্মকাণ্ড দেখেই সেটা বোঝা গেছে।
তিনি বলেন,বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শিষ্টাচার, শ্রদ্ধা ও সৌজন্যবোধ উঠে গেছে। এই ঘটনার মধ্যে দিয়েই তা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা দুঃখিত, ব্যথিত। সরকার খালেদা জিয়াকে বাড়িটি লিজ দিয়েছিল। তৎকালীন সরকারের কাছে বাড়িটি তিনি চাননি। তারা একজন স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর কথা উপলব্ধি করেই বাড়িটি দিয়েছিল। বাড়িটি তারা অবৈধভাবে না বৈধভাবে দিয়েছে তা খালেদা জিয়ার দেখার বিষয় নয়। প্রায় ৪০ বছর পর বাড়ি থেকে তাকে নিষ্ঠুরভাবে উচ্ছেদ করায় শুধু বিএনপি নয়, সাধারণ মানুষও কষ্ট পেয়েছে। ম্যাডামের সাথে এমন আচরণ করায় আমরা ুব্ধ। ’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবিএম মোশররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার সেনানিবাসের বাসা থেকে উচ্ছেদ করার পর দ্বিতীয় বার বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে দু:খের ছায়া নেমেছে। স্বজন হারালে মানুষ যেভাবে শোকাহত হয়, এ ঘটনা ঠিক,সেভাবেই তাদের মর্মাহত করেছে। ’
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে যেভাবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটছে বলে আমাদের জানা নেই। ’ তিনি বলেন, ‘সরকার যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা জাতি কখনোই ভুলবে না। এই ঘটনা দলের নেতাকর্মীদের দু:খিত-বেদনার্ত করেছে। ’
বাংলাদেশ সময় ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১০