ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

খালেদা কান্নাকাটি করে সস্তা সেন্টিমেন্ট দেখিয়েছেন: হানিফ

সিনিয়র করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১০
খালেদা কান্নাকাটি করে সস্তা সেন্টিমেন্ট দেখিয়েছেন: হানিফ

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়ার পর কান্নাকাটি করে সস্তা সেন্টিমেন্ট দেখিয়েছেন।   এ মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।



একই সঙ্গে বিএনপির ডাকা রোববারের হরতাল দেশবাসী প্রত্যাখান করেছে বলেও হানিফ দাবি করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে সম্পত্তি রক্ষার জন্য হরতাল নজিরবিহীন। তবে বাড়ি নিয়ে হরতালসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির আর কোনো কর্মসুচি দিলে সরকার ও প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

হানিফ আরো বলেন, ’৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও তারা বলেছিল ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া আর কিছুই নেই। একই কথা গতকালও (শনিবার) বলেছে আমাকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছে। আসলে খালেদা জিয়া সব সময়ই জাতির কাছে সস্তা সেন্টিমেন্ট (সস্তা আবেগ ) দেখিয়ে সহানুভ’তি পেতে চান।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন।  

হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার কান্না দেখার পর অনেকেরই খারাপ লেগেছে। আমাদেররও খারাপ লেগেছে। উনি কেন কাঁদলেন, উনি কি আশ্রয়হীন? উনার কি রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে?

গুলশানে উনার বাড়ি রয়েছে। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মিন্টো রোডে উনার জন্য সরকারি বাড়ি আছে। সেখানে তিনি উঠলেন না কেন?

হানিফ পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, সামান্য একটি বাড়ির জন্য যদি খালেদা জিয়া মায়া ত্যাগ করতে না পারেন তবে দেশের জন্য মানুষের জন্য তিনি কি ত্যাগ করবেন?

বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছে বলে খালেদা জিয়ার অভিযোগকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করে হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া রোববার পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে প্রায় শতাধিক কার্টন স্যুটকেস ও ব্যাগ তার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার ও ছোট ছেলে কোকোর শ্বশুর বাড়িতে স্থানান্তর করেন।  

বাসায় থাকা অন্যান্য মালামাল চমৎকারভাবে প্যাকিং করে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাড়ির সকল ঝাড়বাতি, এমন কি এমইএস এর সরবরাহ করা বাল্ব ও টিউবগুলোও খুলে নেওয়া হয়েছে।

কয়েক দিন ধরে বাড়ির মালামাল তারা সরিয়ে নিচ্ছে। মিডিয়াতে এ খবর এসেছে। এসব খবর যদি মিথ্যা হতো তাহলে তারা এর প্রতিবাদ করতে পারতো।

বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার দিনের ঘটনা বর্ণনা করে হানিফ বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বাসায় অবস্থানরত ৬৭ জন পরিচারক/পরিচারিকা ও সহকারীর মধ্য থেকে ৬১ জন বাসা ছেড়ে চলে যান। মূল ভবনের ভেতর বেগম খালেদা জিয়া তখনও ঘুম থেকে ওঠেননি বলে জানানো হয়।

বেলা ১১টার দিকে তিনি জানতে পারেন যে, তাকে বাসা ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ এসেছেন। তখন তিনি আয়েশী ভঙ্গিতে প্রস্তুত হতে শুরু করেন এবং প্রসাধনী ও আনুসঙ্গিক কর্মকাণ্ডে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন।

এই অহেতুক কালপেণ দেখে দুইজন মহিলা পুলিশ সদস্য তার রুমের সম্মুখে হাজির হলে তিনি ভীষণভাবে েেপ যান এবং উত্তেজিত কণ্ঠে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরকে অকৃতজ্ঞ, কুকুর ও জাতীয় দুশমন বলতে দ্বিধাবোধ করেননি।

এছাড়া সকলের সামনে তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘আমি সবার চেহারা চিনে রাখছি, মতায় যেয়ে লাথি মেরে সকলকে চাকরি থেকে বের করে দেব। ”

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ভাষায় গালিগালাজ করা, হুমকি প্রদান, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, সেনাভূমি প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং র‌্যাব-পুলিশ সদস্যদের সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার উপস্থিত সকলকে হতবাক করে দেয়।

হানিফ আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার প্যাকিং করা দ্রব্যসামগ্রী তদারকি করতে থাকেন এবং এর মধ্য থেকে ১০টি ব্যাগ ও ৪টি কার্টন সাথে করে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

তার নিজস্ব কর্মচারী দিয়ে ১০টি বড় ব্যাগ ও ৪টি বৃহৎ কার্টুন ৩টি গাড়িতে ওঠানো হয়। এরপর তিনি একে একে প্রতিটি রুমে যান এবং সবকিছুই ঠিকঠাক আছে দেখে এগুলোর নিরাপত্তা ও হেফাজতের বিষয়ে লিখিত নিশ্চয়তা চান।

খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে না থাকেন তাহলে ১, ৪, ৬ ও ৯ নভেম্বর প্রয়োজনীয় মালামাল সরালেন কেন?’  

‘আপনি খাওয়ার সময় পেলেন না, অথচ যথারীতি মেকাপ-গেটাপ নিয়েছেন। তা নিলেন কিভাবে?’

হানিফ বলেন,‘বাড়িটিতো আপনি অবৈধভাবে প্রাপ্ত হয়েছেন বলে ছাড়ার জন্য কোর্ট রায় দিয়েছে। সরকার, আদালত তো মানবিকতার উদাহরণও রেখেছে। সরকার অমানবিক হলে কোর্ট যেদিন রায় দিয়েছে সেদিনই আপনাকে বের করে দিত। আবার কোর্টও আপনাকে ১ মাসের সময় দিয়েছিল। ’

হানিফ আরো বলেন, ‘বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো ভ’মিকাছিলো ন্। া’

ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নোটিশ দিয়েছিলো,তি্িন হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তারা মামলার রায় স্থগিতের কোনো আবেদন করেননি।

হরতাল প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, ‘স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে অসৎ রাজনৈতিক ফায়দা লোটার উদ্দেশ্যে বিএনপি ঈদুল আযহা’র মাত্র ২দিন পূর্বে হরতাল করেছে। যা হৃদয়হীন, অমানবিক স্বেচ্ছাচারিতা বটে। ’

হরতাল আহ্বানের আগে বিএনপি নেতৃত্ব একটিবারও কি ভেবে দেখতে পারতেন না ঈদুল আযহা উপলে ঘরমুখী মানুষের অবস্থা কি হবে? আজ যাদের লঞ্চ, বাস, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহনের টিকেট কাটা ছিল তারা কি করে আপনজনের সাথে ঈদ করবে? কোরবানীর পশু পরিবহনের পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে?

গার্মেন্টস, শিল্প-কলকারাখানা ও আমদানী-রপ্তানির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তাদের বিবেচনা করা কি উচিৎ ছিল না?

চামড়া শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা যদি ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রপ্তানি বাধাগ্রস্থ হবে, দেশ বৈদেশিক মুদ্রা হারাবে।   নিম্ন আয়ের সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীদের দিুর্ভোগ পোহাতে হবে।

স্কুল-সমাপনী বৃত্তি পরীার্থীদের মানসিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? রাজনীতি, রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দল সম্পর্কে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মনে কি ধরণের ধারণা জন্মাবে? আগামীদিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনে রাজনীতি বিমুখতা সৃষ্টি কি সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে?

একটি দুর্নীতিবাজ পরিবারের ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসের জন্য এই গণবিরোধী হরতাল আহ্বান করা কতটুকু যৌক্তিক ছিল?

হানিফ বিএনিপ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি রার জন্য দেশকে আপনারা আর ধ্বংস করবেন না।

বাংলাদেশ সময় ১৭০৫, নভেম্বর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।