ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

দরজা ভেঙ্গে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা হয়েছে: বিএনপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১০
দরজা ভেঙ্গে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা হয়েছে: বিএনপি

ঢাকা: দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে সেনানিবাসের বাস ভবন থেকে খালেদা জিয়াকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এ অভিযোগ করেন।



এ সময় তার সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আর দুপুরের পর সেনানিবাসের বাসভবন থেকে উচ্ছেদ হওয়া খালেদা এ সময় তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি।

এদিকে খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছার পর থেকেই সিনিয়র নেতারা গুলশান কার্যালয়ে সমবেত হতে শুরু করেন। বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও দলে দলে জমায়েত হতে থাকেন সেখানে। সংবাদ সম্মেলন চলাকালেও খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদ ও সদ্য ঘোষিত হরতালের সমর্থনে চেয়ারপারসনের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা মিছিল-শ্লোগানে মুখরিত করে রাখেন তারা।

খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, ‘সাদা পোশাকের পুলিশ ও র‌্যাব প্রথমে খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে। তারা নেত্রীর স্টাফদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে বলা হয়। কিন্তু নেত্রী তাদের কাছে আইনজীবীদের মাধ্যমে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এরপর আইনজীবীরা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। নেতাদেরও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এক সময় ওই বাড়িতে যারা ছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পরে মূল গেট ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে তারা। দরোজা ভেঙ্গে নেত্রীর বেড়রুমে গিয়ে নক করে। এরপর তাও ভেঙ্গে ফেলা হয়। নেত্রীকে তারা তাদের সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু নেত্রী তাতের রাজি না হওয়ায় তারা জোর করে তাকে তুলে নেওয়ার কথা বলে। ’

খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, ‘এক পর্যায়ে নেত্রীকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারা নেত্রীকে গুলশান অফিসে নিয়ে আসে। ’

তিনি বলেন, ‘নেত্রীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ওই বাসাতেই রয়েছে। এখনো বাড়ি ভাঙ্গা চলছে। ’

সুপ্রীম কোর্ট আপীল গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী তো প্রধানমন্ত্রীর আওতাধীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও কয়েকদিন ধরে বলছেন যে, নেত্রীকে বের করে দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। কিন্তু ঈদের আগে তারা তা করে অধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার নীল নকশার নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। দেশে এতো সমসা থাকতে খালেদা জিয়ার ওপর তাদের রাগ হওয়ার কারণ হলো- তিনি স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী। এছাড়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ায় ও বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই তার কাল। ’

তিনি বলেন, ‘এ সরকারে জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আজ (শনিবার) সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। এ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। ’

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘তারা সামরিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এমনকি আদালতকেও নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার ঈদের আগেই হরতাল দিতে বাধ্য করেছে। ঈদের পর আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। জনগণ আমাদের সহায়তা করবে। ’

এ পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমরা সকাল সাড়ে আটটায় জাহাঙ্গীর গেটে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ঢুকতে না দেওয়ায় আমরা ব্যারিস্টার রফিক উল হকের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু সেখানেও প্রথমে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ’

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে আমরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করি। আমরা তাকে অনুরোধ জানাই যেন আপীলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা না হয়। প্রধান বিচারপতি আমাদের আশ্বস্ত করেন যে, সরকার তা করবে না। ’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির এরকম সিদ্ধান্তের পরও  সরকার এ ধরনের কাজ করেছে। এটা কি ধরনের কাজ হলো প্রধান বিচারপতি তা বিচার করবেন।

এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেন, ‘নেত্রী কোথায় থাকবেন তা নেত্রীর সিদ্ধান্ত। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।