ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

জনসভায় ভাষণে হার্ডলাইনে খালেদা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১০
জনসভায় ভাষণে হার্ডলাইনে খালেদা

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদে প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।   পাশাপাশি সরকারের প্রতি বেশ কিছু শর্তও বেঁধে দিয়েছেন।

  এসব শর্তের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভারতের সঙ্গে করা ট্রানজিটসহ সকল চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করার শর্তটি।

অন্যদিকে এখন থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে তা ভঙ্গ  করেই সমাবেশ করা হবে বলে তার দলের কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেন তিনি।

 বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রোববার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের জাতীয়তাবাদী শক্তি থাকতে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কোনো বিদেশি গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। ’
ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিকে ‘দেশবিরোধী চুক্তি’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে চুক্তি করেছেন তা অবিলম্বে বাতিল করুন। ’

প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তৃতাটি আগাগোড়া সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি আর হুমকিতে ঠাসা ছিল। এসবের মধ্যে প্রণিধানযোগ্য ছিল আগামীতে বিএনপির সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে তা ভঙ্গ করেই সমাবেশ করার ঘোষণাটি।

‘ঈদের পর সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেওয়া হবে’ বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়ার আরেকটি হুঁশিযারি হচ্ছে, বিএনপি সরকার গঠন করলে বর্তমান সরকারের আমলে চাকুরি দেওয়া দলীয় ক্যাডারদের চাকরিচ্যুত করার ঘোষণা।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা আমাদের সমাবেশ করতে দেন না। আমরা সমাবেশ ডাকলেই আপনারা ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু এরপর যদি বিএনপির সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় তাহলে তা ভেঙ্গেই সমাবেশ করা হবে। সমাবেশের অনুমতি চাইলে যদি না দেওয়া হয় অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করা হবে। ’

তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) ৪৪৮ জনকে ওএসডি করেছে। এ কারণে প্রশাসন অচল হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও বিচারবিভাগসহ সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ করে সব কিছু অচল করে দেওয়া হচ্ছে। ’

সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের চাকরিচ্যূত করা হবে। ’

টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এসপি, ডিসি, শিক্ষকদের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা মারধর করছে। তাদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যাদের দলের লোকজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই তারা কি করে দেশ নিয়ন্ত্রণ করবে? তারা আসলে বিদেশি নিয়ন্ত্রিত হয়ে বিদেশিদের খুশি করতেই কাজ করছে। ’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিদেশি পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ সরকারের ওপর আস্থা নেই বলেই বিদেশের শ্রম বাজারে আমাদের শ্রমিক নিচ্ছে না। ’

এ সরকারকে বিদায় দিতে না পারলে দেশের উন্নতি হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকারকে বিদায় দিতে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু আপনারা যদি মামলা, হামলা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ না করেন, এসব অপকর্ম থেকে সরে না আসেন এবং দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল না করেন তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশবিরোধী-স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হবে।

এছাড়া সরকারের খুন, গুম, লুটপাট, অন্যায় কর্মকাণ্ড, লুটতরাজ, দেশবিরোধী চুক্তি, অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদির বিরুদ্ধে দেশরক্ষার কর্মসূচিতে মা-বোন-সাধারণ মানুষ ও পেশাজীবী সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান বিএনপিনেত্রী।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে  সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।