ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

১৫ বছরের নিপীড়নের স্মৃতি বুকে তারুণ্যের সমাবেশে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৫, মে ২৮, ২০২৫
১৫ বছরের নিপীড়নের স্মৃতি বুকে তারুণ্যের সমাবেশে ছবি: বাংলানিউজ

তীব্র গরমে ভেজা মুখ, উচ্চকিত গলায় উচ্ছ্বসিত স্লোগান, চোখে অবারিত সাহস। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠনের বুধবারের (২৮ মে) তারুণ্যের সমাবেশ শুধু রাজনৈতিক সমাগম নয়, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের নিপীড়নের স্মৃতিও যেন ফিরিয়ে এনেছে।

এই জমায়েতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের কথায় জানা যায়, বিএনপির নেতা-কর্মীরা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, যেন রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিশোধের লক্ষ্য ছিলেন গত ১৫-১৬ বছর।  

সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীরা বলছিলেন, বিগত সরকারের আমলে অনেককে রাতের অন্ধকারে র‌্যাব বা গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তারা আর ফিরে আসেননি। অনেক পরিবারের কাছে এখনো গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের কোনো তথ্য নেই, বেঁচে আছেন কি না- তাও জানা নেই। এই রকম পরিবারের সংখ্যা শত শত। যারা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছেন বছরের পর বছর। আজকের সমাবেশে যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন, তাদের অনেকেই জেল খেটেছেন একাধিকবার, এমনকি পুলিশি নির্যাতনের চিহ্নও শরীরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তারা বলছেন, রাজপথে নেমে আসা এই মানুষগুলো শুধুই রাজনৈতিক কর্মী নয়, তারা নিপীড়নের ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। নির্যাতিত এই মানুষগুলো আবার এসেছেন রাজপথে। তাদের চোখে এখন একটিই স্বপ্ন- একটি ফ্যাসিবাদহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেখানে রাজনীতি অপরাধ নয়, মত প্রকাশ শাস্তিযোগ্য নয়, বরং অধিকার। তারা চান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা, যেখানে কেউ রাজনৈতিক কারণে গুম হবে না, কেউ অন্যায় মামলায় বছরের পর বছর জেলে সময় পার করবে না, কেউ রাজনীতির জন্য পিতা,ভাই, পুত্র, পরিবারের সদস্য বা বন্ধু হারাবে না।

ঢাকার মগবাজার থেকে এ সমাবেশে আসা যুবদলের রফিকুল ইসলাম বলেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমাকে ৮টা মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাকে না পেয়ে আমার ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঈদ কিংবা কোনো উৎসবেই আমি বাড়িতে যেতে পারিনি। ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে।

অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভিন্নমত হয়ে উঠেছিল অপরাধ। বিরোধী রাজনীতি করার অপরাধে মামলার বোঝা, বাড়িতে হানা, চাকরি হারানো, এমনকি সন্তানের স্কুলে ভর্তি বন্ধ, এসব ছিল ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল্য। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আজ রাজপথে তারা ফিরেছেন, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের আছে দীর্ঘশ্বাস, হারানোর স্মৃতি আর একটিমাত্র আশা- এই ভয়াবহ অধ্যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনোদিন ফিরে না আসুক।

ভালুকা থেকে আসা যুবদলের কর্মী মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ বছর আমি নিজের এলাকায় থাকতে পারিনি। বিএনপি করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের বিরুদ্ধে যা করেছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, এটা একটা প্রজন্ম ধ্বংস করার প্রক্রিয়া।

কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত অনেকের গল্প লোমহর্ষক। কেউ কেউ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে কাজ নিয়েছেন, রিকশা চালিয়েছেন, কেউ নিজের পরিচয় আত্মগোপন করে এখানে-সেখানে দিনের পর দিন লুকিয়ে থেকেছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের এই পুরো শাসনামলে শত শত বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়।

ফরিদপুর থেকে আসা আব্দুল কালাম বলেন, ফরিদপুর জেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের অত্যাচারে গত ১৪ বছর আমি এলাকাছাড়া ছিলাম। আমাকে না পেয়ে আমার পুরো পরিবারের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করেনি, মানুষের জীবন, স্বাধীনতা এবং স্বপ্নকেও হত্যা করেছে। এই অন্যায়ের বিচার হতেই হবে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বক্তা হিসেবে আছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সকাল ১০টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকেও নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন।

সমাবেশ ঘিরে এলাকাজুড়ে লাগানো হয় মাইক। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার, টি-শার্ট পরে এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে অংশ নেন। তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশ প্রাঙ্গণ।

এসবিডব্লিউ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।