ঢাকা: বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ চলছে। রাজধানীর নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ থেকে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ব্যানারে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী সমাবেশে অংশ নিতে এসেছে।
এই প্রজন্ম ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সমাবেশে অংশ নিয়ে নিজেদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। ২০১৪ সালের একতরফা এবং ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তা থেকে বের হতে দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছেন তারা। তরুণরা বলছেন, বিগত ১৫-১৬ বছর যে প্রহসন হয়েছে, একাধিক নির্বাচনের আয়োজন হলেও ‘ভোটাধিকার’ শব্দটা তাদের কাছে ‘প্রত্নতাত্ত্বিক’ হয়ে উঠেছে। দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে সেই স্মৃতি ভুলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন তারা।
তীব্র রোদে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের রাস্তায় ‘তারেক জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ‘আওয়ামী লীগের দোসর সব, হুঁশিয়ার-সাবধান’ স্লোগান দিচ্ছিলেন সাভার থেকে আসা রুবায়েত ইমতিয়াজ (২৬) নামে এক তরুণ। কথা হলে বাংলানিউজকে বলেন, ১৮ বছর বয়সে ভোটার হয়েছি, কিন্তু আজও ভোট দিতে পারিনি। এতগুলো বছর ধরে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই।
সিলেট থেকে আসা যুবদলের কর্মী মাসরুর হোসেন বলেন, বাবা-মার মুখে শুনেছি ভোটের দিন কেমন হতো। সারাদিন নাকি উৎসবের মতো পরিবেশ থাকতো। পরিবার মিলে ভোটকেন্দ্রে যেত। কিন্তু নিজের চোখে দেখা হয়নি। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসুক এবং নিজের ভোটের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠুক।
আমার ভোটেই হোক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ।
ছাত্রদলের ঢাকা জেলা কর্মী মেহেদি হাসান বলেন, ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে ও ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচন একটি পুরো প্রজন্মকে ভোটের মৌলিক অধিকার থেকে ছিটকে ফেলেছিল। এসবের অবসান হবে শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা এ বছরই নির্বাচন চাই। নইলে রাস্তাই হবে চূড়ান্ত জবাবের মঞ্চ।
তরুণদের প্রতিবাদী কণ্ঠে বারবারই উচ্চারিত হচ্ছে— দিনের ভোট রাতে করে যারা, তারা ফ্যাসিবাদী, গণতন্ত্রের শত্রু! তারা পতিত আওয়ামী লীগের শাসনকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন, আজ দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের দাবি নয় বরং একটি ভোটবঞ্চিত প্রজন্মের অন্যতম এখন চাওয়া।
আজকের সমাবেশ কেবল একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়, বরং তরুণদের ভোটাধিকারের দাবিকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা। অনেক তরুণই রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ভোটের অধিকার নিয়ে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ হয়ে উঠছে তরুণদের অস্তিত্বের রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।
তরুণদের মধ্যে এখন আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে, এমন ধারণা নেই। তাদের মূল দাবি- অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে নাগরিকদের ভোটাধিকার থাকবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলবে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
এসবিডব্লিউ/এমজে