ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না আ’লীগ

শামীম খান, সিনিয়র করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১০
সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না আ’লীগ

ঢাকা: বার বার উদ্যোগ নেওয়ার পরও নতুন কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিও সম্পন্ন করতে পারছে না দলটি।

ঘরোয়া সভা-সেমিনার আর জাতীয় ও দলীয় দিবসভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম।

সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় দলের কর্মীরা ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন অধিকাংশ সময়। দলীয় কার্যালয়ের পরিবর্তে সরকারি অফিস-আদালতে তাদের ঘোরাফেরা বেশি। সচিবালয়, নগরভবন, রাজউক, খাদ্যভবন, শিক্ষাভবন, বিদ্যুৎভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তদবির, দেনদরবারেই এখন বেশি ব্যস্ত তারা।

আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকার সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলের সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম থাকতো দিনরাত। দল ক্ষমতায় আসার পর দলীয় কার্যালয়েয় সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে কর্মীদের। কেন্দ্রীয় নেতারাও নিয়মিত কার্যালয়ে যান না।

সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বেশ কিছু সংগঠন গড়ে তুলে সেগুলোর ব্যানারে আলোচনা সভা ও সেমিনার করা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মী।

বঙ্গবন্ধু একাডেমি, নৌকার নতুন প্রজন্ম, রাসেল একাডেমি, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবর্তন ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংগঠনের নামে রিপোটার্স ইউনিটি ও প্রেসকাবের সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। এসব আলোচনাসভায় মন্ত্রী, এমপিসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের প্রধান অতিথি করা হচ্ছে।

এদিকে, গত জানুয়ারি থেকে দলের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরে এখনো এ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দলের সবগুলো সহযোগী সংগঠন, অধিকাংশ জেলা কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর আগে কয়েকবার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েও তা করতে পারেনি দলটি।

এদিকে, গত ১৮ মার্চ শুরু হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক জেলা সফর। এ কর্মসূচিও শেষ করতে পারেনি। এখনও বাকি রয়েছে ঢাকাসহ ২০টি সাংগঠনিক জেলা সফর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩টি, চট্রগ্রাম বিভাগের ৬টি এবং রাজশাহী বিভাগের একটি।

এ অবস্থায় সাংগঠনিক কর্মসূচিতে গতি আনতে দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়। তবে গত ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে গণজাগর সৃষ্টিসহ সরকারের সাফল্যগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে বিভাগীয় পর্যায়ে মহাজোটগতভাবে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও এখনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারেনি।

গত রোজার ঈদের পরপরই সেপ্টেম্বরে বিভাগীয় পর্যায়ের এ সমাবেশ করতে বলা হয়েছিল। পরে সেটা আর হয়নি। এমনকি এ বিষয়টি নিয়ে জোটের শরিকদের সঙ্গেও কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া মহাজোট এবং ১৪ দলীয় জোট দীর্ঘদিন যাবৎ নিষ্ক্রিয়।

গত ৯ অক্টোবর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবারো বিভাগীয় মাহাসমাবেশ করার কথা বলেন। নভেম্বেরে এ সমাবেশ করা হবে বলে জানান তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কোনো আলোচনা হয়নি বলে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলানিউজকে জানান।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, ‘তৃণমুলে সাংগঠনিক কাজ শুরু হয়েছে। তৃণমুলে আওয়ামী লীগ যেভাবে বিস্তৃত অন্য দলের সে সুযোগ নেই। এ তৃণমুলকে সংগঠিত রাখতে প্রয়োজনীয় টিমওয়ার্ক হচ্ছে না। ’

তিনি বলেন, ‘লিডার (নেত্রী) একটি কর্মঠ টিম দিয়েছেন। কিন্তু টিমকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না। ’

এ প্রসঙ্গে যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ দিকে জেলায় জেলায় সমাবেশ হতে পারে। জেলা সমাবেশ শেষে বিভাগীয় সমাবেশ করা হবে। ’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততার কারণে হয়তো কেউ কেউ সাংগঠনিক দায়িত্ব যথাসময়ে পালন করতে পারছে না। তবে বাকি থাকা জেলাগুলোতে সাংগঠনিক সফর দ্রুতই শেষ করবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।