ঢাকা: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, পবিত্র ধর্মকে আর রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করতে দেবো না। আমরা এর অপব্যবহার বন্ধ করবোই।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান ও স্বাধীনতার মূল চেতনার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান পুনর্মুদ্রণে হাইকোর্টের রায় অনুসরণ করা হবে। এরপর কমিটি বসে রাজনৈতিক বিবেচনা সাপেক্ষে এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারবে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৭২ এর সংবিধান ও স্বাধীনতার মূল্যবোধের পথে এগিয়ে যাবোই। সে সঙ্গে ধর্মীয় অধিকারও সংরক্ষণ করতে চাই। ’
সুরঞ্জিত বলেন, পুনর্মুদ্রণের পর আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসবো। সেখানে দল থাকবে, জোট থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।
এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের আছে। জনগণ আমাদের সে রায় দিয়েছে। ’
‘আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি, এরপর প্রতিবিপ্লবীরা ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলো। ৪০ বছর সংগ্রাম করে ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছি। আগামী প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে পারে আমরা সে ব্যবস্থা করতে চাই। ’ বলেন সুরঞ্জিত।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্য প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত বলেন, ‘তিনি বুঝে শুনেই সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্র ও নির্বাচিত সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। ’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আলাদা কোনও সরকার নয়, এটি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান। ’
তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের স্তম্ভ তিনটি। এগুলো হলো নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ। এ তিনটির একটি নির্বাহী বিভাগে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিডিআরসহ আরও প্রতিষ্ঠান আছে। নির্বাহী বিভাগের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। দেশের নির্বাহী প্রধান এখন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সালে খালেদা জিয়াকে সামরিক বাহিনীর বাড়িটি দেওয়ার যে প্রস্তাব এসেছিলো তখন তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে এসেছিলো। সে সময় যেহেতু রাষ্ট্রপতি নির্বাহী প্রধান ছিলেন তাই সাত্তার সাহেব এর অনুমোদন দিয়েছিলেন। তাই সেনাবাহিনীও অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টের ক্যাটাগরি ম্যানেজ করে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। এ ক্যান্টনমেন্ট বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে।
সুরঞ্জিত বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়ার নোটিশ সরকার দেয়নি। সেনাবাহিনী দিয়েছে। সামরিক বাহিনীই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খালেদা জিয়া তা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেছেন। একটি নয়, দু’টি নয়, তিনটি আদালতে তিনি গেছেন। আদালতও বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার রায় দিয়েছে। ’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে অবিলম্বে বাড়ি ছেড়ে দিন। সামরিক বাহিনীর বাড়ি সামরিক বাহিনীই পাবে।
তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের বলেছেন, সেনাবাহিনী বললে তারা বাড়ি ছেড়ে দেবেন। নোটিশ তো সেনাবাহিনীই দিয়েছে। আদালতও নোটিশের পক্ষে রায় দিয়েছে। এখন ছেড়ে দিয়ে নজির স্থাপন করুন। ’
সেইসঙ্গে তিনি খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাড়িও ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘গুলশানের বাড়িও ছেড়ে দিন। রাষ্ট্র আপনাকে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে যে বাড়ি দিয়েছে সেখানে গিয়ে উঠুন। তাতে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে। ’
বিএনপিকে অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারাই পথ দেখিয়েছেন। রেহানার বাড়ি কেড়ে নিয়েছেন। শেখ হাসিনার বাড়ি বাতিল করেছিলেন। ’
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সম্পর্কে সুরঞ্জিত বলেন, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আর চলবে না। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর জিয়া, মোস্তাক সায়েম অবৈধ হয়ে গেছে। তাদের কাজগুলোও অবৈধ হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সামরিক ছাউনির রাজনীতি এখন চলবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে এখন নির্বাচিত সরকার জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ‘এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মধ্য প্রাচ্য ও চিন আপনাদের সঙ্গে ছিলো। এখন সারা বিশ্বের মানুষ বুঝেছে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও গণতন্ত্র এক সঙ্গে চলে না। ’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই বিচারে অপরাধীরা সব ধরনের আইনি সুবিধা পাবে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেসব বিচার হয়েছে সেখানে দেওয়া হয়নি। বিচারের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বলবো তাড়াতাড়ি যাতে বিচার হয় সেই ব্যবস্থা করবেন। ’
তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, দয়া করে তাড়াতাড়ি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দিয়ে দিন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও আমরা সেরে ফেলতে চাই।
আবদুল হক সবুজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংসদ ইসরাফিল আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১০