ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

৪ ঘণ্টার মধ্যে নাম-বয়স পাল্টে ফেলেন সাঈদী!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১২
৪ ঘণ্টার মধ্যে নাম-বয়স পাল্টে ফেলেন সাঈদী!

ঢাকা: মাত্র চার ঘণ্টায় সার্টিফিকেটে নাম ও বয়স পাল্টিয়ে ফেলেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আগে তার নাম ছিল আবু নাইম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

দাখিল পাশ করার সময় তার বয়স দেওয়া হয়েছিল মাত্র ১০ বছর। এই বয়সে কারো দাখিল পাশ করা সম্ভব নয়। এ নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে। তাই তিনি তার বয়স ও নাম পাল্টিয়ে ফেলেন। ডেইলিএডুকেশন.নেট (www.dailyeducation.net) নামে একটি সংবাদ মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

মাদরাসা বোর্ড থেকে ২০০৮ সালের ১০ নভেম্বর মাত্র চার ঘণ্টায় সাঈদী তার দাখিল ও আলিম সার্টিফিকেট দুটোতে নাম ও বয়স সংশোধনের কেরামতি দেখিয়েছিলেন। সাধারণত নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ ও টাকা জমা দেওয়ার পর অন্তত এক মাস অপেক্ষা করতে হয়। নাম ও বয়স সংশোধনে সাঈদীর পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরা হয়।

সাঈদীর নাম ও বয়স সংশোধন করতে সহযোগিতা করেন সে সময়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবদুন নূর ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সালেহউদ্দীন। প্রায় নয় বছর ধরে সালেহউদ্দীন একই পদে বহাল আছেন। মাত্র চার ঘণ্টায় সাঈদীর সব কাগজপত্র সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় ফাইলে স্বাক্ষর করেন তারা। ওইদিনই সাঈদীর জন্য জরুরি সংশোধনী সভা ডাকা হয়েছিল বলে জানা গেছে।

পাশ করার এত বছর পরে সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা তৎকালীন মাদরাসা বোর্ড চেয়ারম্যান মো. ইউসুফের কাছ থেকেও কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন মো. আবদুন নূর। ২০০৩-এর শুরু থেকে ২০০৯ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত তিনি একই পদে আসীন ছিলেন। মাঝখানে কয়েকমাস প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে একটা প্রকল্পে চাকরি করার পর আবদুন নূর ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন এবং এ মুহূর্তে একই পদে আছেন।

বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ১৯৫৭ সালে সাঈদীকে দাখিল পাশের যে সার্টিফিকেট দিয়েছিল তাতে নাম লেখা ছিল আবু নাইম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ১৯৬০ সালে দেওয়া আলিম পাশের সার্টিফিকেটেও আবু নাইম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীই লেখা ছিল।

জানা যায়, দাখিল পরীক্ষায় পাশ করার ৫১ বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ সালে ১০ নভেম্বর সাঈদী তার নাম ও বয়স সংশোধন করে নতুন সার্টিফিকেট নেন নিবার্চনে অংশ নেওয়ার জন্য। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র জমাদান বাধ্যতামূলক করলে তিনি তড়িঘড়ি নাম পরিবর্তন করেন।

মাদরাসা বোর্ড থেকে দেওয়া সংশোধিত সার্টিফিকেটে সাঈদীর দাখিল পাশের বয়স লেখা হয়েছে ১৬ বছর এক মাস। এর সঙ্গে মিল রেখে আলিমের সার্টিফিকেটে বয়স লেখা হয়েছে ১৯ বছর এক মাস। আগের সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাঈদীর দাখিল পাশের সময় বয়স ছিল ১০ বছর। পাবলিক পরীক্ষার নীতিমালা অনুযায়ী এসএসসি ও সমমানের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিতে বয়স থাকতে হয় ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

মাদরাসা বোর্ডের একজন কমকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ``বিভিন্ন সভায় নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য আবেদনকারীদের আবেদনের যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই অনুমতি দেওয়া হয়। যেহেতু আগেকার দিনে সার্টিফিকেট ও নম্বরফর্দে শিক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর ইত্যাদি হাতে লেখা হতো। ``

একাত্তর সালে হত্যা ধর্ষণ অগ্নি সংযোগ জোর করে ধর্মান্তর করা সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী ‍অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১২
ইএস/এআর/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর[email protected]

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।