ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

বরিশাল-১ ও ৪

ফুরফুরে মেজাজে নৌকার হাসানাত ও ঈগলের পঙ্কজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
ফুরফুরে মেজাজে নৌকার হাসানাত ও ঈগলের পঙ্কজ

বরিশাল: দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটগ্রহণের দিন ততোই ঘনিয়ে আসছে। এরইমধ্যে জমজমাট হয়ে উঠতে শুরু করেছে বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনে প্রচার-প্রচারণার মাঠ।

 

যে মাঠে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের নৌকার প্রার্থী ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার মতো একই অবস্থা বিরাজ করছে বরিশাল-৪(হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং এবারের স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী পঙ্কজ নাথ।

স্থানীয় সূত্র বলছে, এ দুটি আসনেই হেভিওয়েট ওই দুই প্রার্থীর সঙ্গে ভোটযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার মতো আর কোনো প্রার্থী নেই। সেইসঙ্গে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও পঙ্কজ নাথের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাও তাদের নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-১ আসনে আসনে জাতীয় পার্টির সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী লাঙ্গল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. তুহিন আম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নৌকা মার্কার হেভিওয়েট প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগনে ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের সবাই অভিভাবক হিসেবে মনে করেন। তাই তাকে আলাদা এক উচ্চতায় রাখা হয় এ অঞ্চলে।  এমনকি তার নিজের এলাকায় যে নেতা ও কর্মী-সমর্থক রয়েছেন তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই তার জন্য একট্টা হয়ে কাজ করেন।  সেক্ষেত্রে তার নির্বাচনে অন্য কোনো দলের হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও বিজয় নিয়ে শঙ্কা থাকে না। আবার এবার যারা হাসানাতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তারা সব কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক পাবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

এ আসনের একাধিক সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক খোকন আহম্মেদ হীরা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করার মতো প্রার্থী নেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে বাকি যে দুজন প্রার্থী আছেন তাদের আসনের সকল ভোটার তেমনভাবে চেনেনও না, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মতো জনপ্রিয়ও নন।  তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী নিজেদের বাড়ির পাশের কেন্দ্রেও বেশি ভোট পাবে না বলেই মাঠ জরিপে উঠে আসছে।

তিনি বলেন, সব মিলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন হাসানাত আব্দুল্লাহসহ তার দলে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।  আর স্থানীয় প্রবীণ নিহার রঞ্জন মণ্ডলের মতো আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জয়ের বিষয়ে এরইমধ্যে এক ধরনের নিশ্চিত সাধারণ মানুষ।

এদিকে বরিশাল-৪ আসনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথের বেলাতেও।  এ আসনে এবারে পঙ্কজ নাথকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে দ্বৈতনাগরিক ইস্যুতে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর নির্বাচন কমিশনসহ উচ্চ আদালতে একাধিকবার আপিল করেও তা আর ফিরে পাননি।

তাই বিগত সংসদের নৌকার প্রার্থী পঙ্কজ নাথই এবারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ পরিবার নিয়ে নির্বাচনী-প্রচারণার মাঠে নেমেছেন।  প্রথম দিনেই স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বেশ হাসিখুশি মুখে সংসদীয় এলাকায় গণসংযোগ চালিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, একসময়ের বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত এ আসনটি নানা কৌশলে বাগিয়ে আনেন আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পঙ্কজ নাথ। টানা দুইবারের এমপি পঙ্কজ নাথ ওই আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সঙ্গে বিরোধের সূত্র ধরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।

দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হামলাসহ নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন। তারপরও তিনি নির্বাচন করতে চাননি, পরে স্থানীয়দের অনুরোধে শুধু নামমাত্র প্রার্থী হন তিনি। আর শাম্মীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগে এখন তিনিই ভরসার প্রার্থী। তাকে বিজয়ী করার জন্য সবাই এখন একট্টা।  

এদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান লাঙ্গল, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু ছড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করলেও তাদের তেমন কোনো কর্মী-সমর্থক নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করার প্রার্থী নেই বলে জানিয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা মো. মনির দেওয়ান।  

তিনি বলেন, ড. শাম্মী আহমেদ থাকলে হয়ত পঙ্কজ নাথের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। কিন্তু শাম্মী বাদ পড়ার পর জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো. মিজানুর রহমান ও ছড়ি প্রতীক নিয়ে মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম নামে যে দুইজন প্রার্থী রয়েছেন তারা তেমন প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন না।

এ আসনের একাধিক সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন সাংবাদিক সঞ্জয় গুহ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পঙ্কজ নাথের সঙ্গে এখন প্রতিদ্বন্দিতা করার মতো হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী নেই। তার পরও যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন, তারা স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে তেমনভাবে পরিচিতও নন। হয়তো নিজের বাড়ির পাশের কেন্দ্রেও জয়ের মতো ভোট পাবেন না তারা। আর সবমিলিয়ে এখন বলতে গেলে ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন পঙ্কজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।