ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

আওয়ামী জামানায় এমপি-মন্ত্রিত্ব যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ : রিজভী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
আওয়ামী জামানায় এমপি-মন্ত্রিত্ব যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ : রিজভী

ঢাকা: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় থাকে, লুটপাট করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করে। ফের লুটের শাসন স্থায়ী করতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, হামলা-মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা সাজা দেওয়া হচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। একতরফা নির্বাচনের নাটক ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তারা অন্ধ হয়ে পড়েছে।  

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, আওয়ামী জামানায় এমপি-মন্ত্রিত্ব যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’। গত দেড় দশকে বিনা ভোটের রাজত্বে সরকারের মন্ত্রী এমপি, বড় নেতা, পাতি নেতা সবাই লুটপাটের প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়েছেন। দুর্নীতি, লুটপাট, নৈরাজ্যের স্বর্গ গড়েছেন তারা। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিএনপি নাকি আগামী মার্চ মাসে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে! 

তিনি বলেন, আসন্ন একদলীয় পাতানো নির্বাচন উপলক্ষে তাদের মন্ত্রী, এমপি, ডামি ও উচ্ছিষ্টভোগী স্বতন্ত্রদের হলফনামা পড়লে মনে হয় যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগের কাহিনি পড়ছি। ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মন্ত্রী, এমপি ও তাদের নেতারা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।  

তিনি আরও বলেন, অনেকে প্রায় কপর্দকহীন থেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তান-শাশুড়িরাও টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীদের লোকসান হলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকদের কোনো লোকসান নেই।  

রিজভী বলেন, আওয়ামী রাজনীতি এমন একটি ব্যবসা, যেখানে কোনো ঝুঁকি নেই এবং লোকসানেরও আশঙ্কা নেই। যে ব্যবসা করছেন, তাতেই লাভ আর লাভ। শেয়ার ব্যবসায় তারা কেউ ক্ষতির মুখোমুখি হননি। কৃষি খামার ও মাছের ব্যবসায় বহুগুণ লাভ করেছেন। স্বামীদের ব্যবসা দেখাশোনা করতে গিয়ে স্ত্রীরাও কোটি কোটি টাকা, অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তিনি বলেন, হলফনামা ধরে প্রতিদিন সংবাদপত্রে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে তা দেখে জনগণের  চক্ষু চড়কগাছ! তারা ভাবতে থাকেন, আমরা কি একটি বাস্তব জগতে বাস করছি? নাকি কল্পনার স্বর্গরাজ্যে বাস করছি! এও সম্ভব! একেকজনের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ ৫০০ গুণ, কেউ আবার পাঁচ বছরে ৭০০ গুণ সম্পদেরও মালিক হয়েছেন।  

বিএনপির এই নেতা বলেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে, টাকার পাহাড়ে ঘুমান মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা। দশ বছর আগে যে মন্ত্রীর হলফনামায় হাজারের ঘরে ছিল বার্ষিক আয়, তিনিও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সবাই জানে তাদের হলফনামায় সম্পদের সামান্যই প্রকাশ পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও অনেক তথ্য গোপন করছেন।

রিজভী বলেন, যিনি সারাক্ষণ নীতি নৈতিকতার সবক দেন, সেই আইনমন্ত্রীও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আঙুল ফুলে হয়েছেন বটগাছ। ১০ বছর আগের হলফনামায় দেওয়া নগদ পাঁচ লাখ টাকা এখন পরিণত হয়েছে নগদ ১১ কোটি টাকায়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সম্পদ বেড়েছে ৯৮ গুণ। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরির সম্পদ বেড়েছে ৪৯৭ গুণ।

তিনি বলেন, কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি তাদের হলফনামায় দেশকে শায়েস্তা খাঁর আমলে ফিরিয়ে নিয়েছেন, যে শাসনামলে টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। লুটের অর্থ-সম্পদ কম দেখাতে তাদের প্রায় সবাই যেভাবে গাড়ি, বাড়ি, জমি ও অলংকারসহ সবকিছুর মূল্য অতি সামান্য দেখিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে তারা এখনও শায়েস্তা খাঁর আমলে বাস করছেন। লাফিয়ে সম্পদ ও নগদ অর্থ বেড়ে যাওয়ার পেছনে তাদের আয়ের উৎস যে দুর্নীতি-লুটপাট, তা জনগণ জানে।

রিজভী আরও বলেন, বাস্তবতা হলো মন্ত্রী, এমপি, নেতাদের এ সম্পদ, এ টাকার পাহাড় কীভাবে গড়ে উঠেছে, তাদের আয়ের উৎস কী, এসবের জবাবদিহি নেওয়ার কেউ নেই। কারণ সবকিছু আওয়ামীময়-নষ্টদের অধিকারে। তারা জনগণের সম্পদ চেটেপুটে খেয়ে পেট মোটা করতে এসেছেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদক নামে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু দুদককে দলকানা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যাদের কাজ হলো খুঁজে খুঁজে বিএনপি ও ভিন্নমতের সম্মানিত লোকেদের ঘায়েল করা। রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে এ তথাকথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
টিএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।