ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আন্দোলনের নামে হত্যা-নাশকতার পুনরাবৃত্তি চায় না মানুষ

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
আন্দোলনের  নামে হত্যা-নাশকতার পুনরাবৃত্তি চায় না মানুষ

গাইবান্ধা: হরতাল-অবরোধের নামে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে নারী-শিশুসহ আট নিরপরাধ মানুষ হত্যার পাশাপাশি শত শত ট্রাকে ভাঙচুর-আগুন দেওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না গাইবান্ধা জেলার শান্তিকামী মানুষ।

বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে সড়ক-মহাসড়কে অসংখ্য যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।

আগুন দেওয়া হয় অনেক গাড়িতে। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক ছিল উল্লেখযোগ্য। এতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন ট্রাক মালিকসহ অনেক ব্যবসায়ী।

পিকেটারদের ধাওয়ায় যানবাহন উল্টে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। ছিল অসংখ্য স্কুল পোড়ানো থেকে শুরু করে একাধিক পাকা সড়ক-ব্রিজ কাটার মতো ঘটনা।  

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যায় স্মরণকালের হৃদয় বিদারক ঘটনা।  

ওই দিন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে পেট্রোল বোমা মারা হয়। তাতে নারী-শিশুসহ আটজন প্রাণ হারান।

এদিকে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমান সরকারের অধীনেই ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছে আগামী ৭ জানুয়ারি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো।  

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দফায় দফায় অবরোধ ও হরতালের   ডাক দিচ্ছে তারা।  

ফলে অতীতের অর্জিত তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে নানা আশঙ্কা-ভয় দেখা দিয়েছে জেলার সর্বস্তরের মানুষের মনে। ওই সব ধ্বংসাত্মক ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না কেউই। তারা বলছেন, বিরোধী দল যৌক্তিক কারণে গণতান্ত্রিক যে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতেই পারে, কিন্তু নাশকতা নয়।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন মতামতই পাওয়া গেছে।

কথা হয় গাইবান্ধা
সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনুর সঙ্গে। তিনি বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে বিরোধীদল আন্দোলন-সংগ্রাম করবে, রাস্তায় দাঁড়াবে, এটা তাদের অধিকার। কিন্তু জনগণ তথা দেশের ক্ষতি হয়, এমন কর্মসূচি কাম্য নয়। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রকাশ পাক।  

তার মতে, কিন্তু হরতাল-অবরোধের নামে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, যানবাহনে আগুন দেওয়া, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো কর্মকাণ্ড পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। তাই আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে থেকে স্ব-স্ব কর্মসূচি পালন করুক। মোট কথা, ২০১৩-২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি জনগণ চায় না। এসব করলে জনবিচ্ছিন্নতা ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হবে না।


সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান মাস্টার বলেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনকে জনগণ তথা আমরা সমর্থন করি। তবে তা হতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আমরা হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা চাই না। বিগত নির্বাচন-নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বলি যেন সাধারণ মানুষ না হয়। সে লক্ষ্যে সরকারি ও বিরোধী দল উভয় পক্ষকেই দায়িত্বশীল হতে হবে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী মোস্তফা মাসুম বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধের মধ্যে সুন্দরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়। এতে নারী-শিশুসহ আটজন প্রাণ হারান। তাদের বেশির ভাগের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। সবাই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আমরা আন্দোলনের নামে অতীতের মতো হৃদয় বিদারক ঘটনার ধারাবাহিকতা চাই না। আমরা সাধারণ মানুষের প্রাণহানি চাই না।  

২০১৫ সালের সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার সদর উপজেলার তুলসীঘাটে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির জোটের হরতাল-অবরোধের সময় ঢাকাগামী নাপু এন্টারপ্রাইজ নামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় শিশু ও নারীসহ মারা যান আটজন।  

সেদিন নাপু এন্টারপ্রাইজের বাসটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীচা পাঁচপীর থেকে ৫০-৬০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। পথে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের বুড়িরঘর নামক স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসটি দুর্বৃত্তদের হামলার মুখে পড়ে। এতে নিমিষেই কোচটিতে আগুন ধরে যায় এবং ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন-সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩০), খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের জিলহজ আলী (৩৫), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামের খয়বর হোসেন দুলুর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), পশ্চিম সীচা গ্রামের সাইব মিয়ার মেয়ে হালিমা বেগম (৪২), চন্ডিপুর গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২২), একই গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী রানি দাস (১০) এবং চন্ডিপুর গ্রামের তারা মিয়ার স্ত্রী সোনাভান বিবি (৪৫) ও ছেলে সুজন মিয়া (১০)।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।