ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

নির্বাচনের আগে সবচেয়ে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে: শেখ হাসিনা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
নির্বাচনের আগে সবচেয়ে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে: শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

ঢাকা: আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ যাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ একটা অনির্বাচিত সরকার বসিয়ে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

রোববার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় আওয়ামী লীগ প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান।

সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সভা শুরু হয়ে এক ঘণ্টার বেশি এ সভা চলে।  এ সময় সংসদ নেতা দলের এমপিদের বক্তব্যও শোনেন।  

সভা শেষে কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে এ যাবৎকালের সবচেয়ে কঠিন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অতীতে এত বড় ষড়যন্ত্র কখনো হয়নি। একটা পাপেট (পুতুল) সরকার বসিয়ে দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে এই ষড়যন্ত্র চলছে বিষয়টি এমন না। তৃতীয় কোনো অনির্বাচিত শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এখন ক্ষমতায় যাওয়া বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, সভায় শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও চ্যালেঞ্জিং হবে। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। নৌকা যাকে দেওয়া হবে সবাইকে ঐক্যবব্ধ হয়ে তাকে জয়ী করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে জয় সহজ হবে না। নির্বাচন সব সময় কঠিন হয় তবে এবার আরও কঠিন হবে কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা সব ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। জিততে হলে নিজেদের ঐক্যের বিকল্প নাই ৷ সেই সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।

এ সময় প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি লুলা ডি সিলভারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, যেভাবে ব্রাজিলকে গুছিয়েছিলাম, রেখে গিয়েছিলাম, এসে দেখি ছাড়খার করে দিয়েছে। এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে ক্ষমতায় থাকার লোভে নয়, দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।

আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যোগ্যতা দিয়ে এবার দলের মনোনয়ন পেতে হবে। এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেকে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাতে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা বা বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড করবেন না। যারা করবেন, তার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। কাউকে চেয়ারও দেওয়া হবে না। এবার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, তাই নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে পারে। তবে এলেও তারা নির্বাচন বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। আর যদি বিএনপি না আসে, তবে আরও অনেক দল নির্বাচন আসার জন্য প্রস্তুত আছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির চলমান এক দফা আন্দোলন ও ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের বিষয় নিয়ে সভায় কথা ওঠে।  তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা আন্দোলন করে করুক, আমাদের বাধা দেওয়ার কিছু নেই, তবে রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না।

সভায় কয়েক জন এমপি বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের এমপি একেএম শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য দেন বলে জানা গেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত এমপিদের অনেকেই তার বক্তব্যে সমর্থন জানান।

সূত্র আরও জানায়, সভায় শামীম ওসমান বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ওরা থেমে নেই। সারা দেশে আঞ্চলিক মিডিয়াগুলোকে জামায়াত অর্থায়ন করছে। সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লিখছে। প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েন না। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যিনি জিতে আসতে পারবেন, তাকে জিতে আসতে হবে। হাজার বছরে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন একজন ৷ ভবিষ্যতে লাখো বছরে একজন বঙ্গবন্ধু আসবেন কি না সন্দেহ আছে। কিন্তু এখন প্রতি জেলায় জেলায় খন্দকার মোস্তাকরা আছে। এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। এই মোস্তাকদের চিহ্নিত করতে হবে, এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

সভায় রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী নিজ জেলা দলীয় কোন্দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। গ্রুপিংয়ের কারণে রাজনীতি করতে পারি না বলে অভিযোগ করেন ৷ এ সময় রাজবাড়ীর আরেক এমপি জিল্লুল হাকিম কথা বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দেন ৷ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসি সব জানি, সব খবর আমার কাছে আছে ৷

লালমনিরহাটের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন অভিযোগ করেন, এলাকায় দলের ঐক্য থাকলেও অনেক সময় ঢাকা থেকে অনেকে সমস্যা তৈরি করে, ঢাকায় বসে গ্রুপিং সৃষ্টি করে দেয় এলাকায়। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক  মনোনয়নের ফেরিওলা বেরিয়েছে, তারা মনোনয়ন দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরা সারা বছর মাঠে থাকে না, নির্বাচন এলে তৎপরতা বাড়ে, এমপিদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য দেন, এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।  

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সব তথ্য আছে।  আমি সেভাবেই যাকে মনোনয়ন দেব, তাকে সবার মেনে নিতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
এসকে/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।