ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আন্দোলন প্রতিহত করার সঙ্গে ভোটের প্রচারও চালাবে আ. লীগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৩
আন্দোলন প্রতিহত করার সঙ্গে ভোটের প্রচারও চালাবে আ. লীগ

ঢাকা: বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রতিহত করা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রচার একইসঙ্গে চালাবে আওয়ামী লীগ। দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে কেন্দ্র থেকে সারা দেশে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মাঠে রাখার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোর এক দফা দাবি নিয়ে বিএনপি মাঠে নেমেছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। আর এই উদ্দেশ্য সফল না হলে তারা আগামী নির্বাচনও বানচাল করার চেষ্টা চালাবে, এটি স্পষ্ট। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে দলটি মাঠে নেমেছে, যা তাদের নেতারাও বলছেন।  

তারা বলছে, এ অবস্থায় পাল্টা শক্ত অবস্থান নিয়ে চাপে রেখেই বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এটি করতে হলে বিএনপি যাতে মাঠ দখল করতে না পারে, সে জন্য এখন থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শুরু থেকেই প্রতিরোধের মাধ্যমে চাপে রাখতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন। এ কারণে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুই দিক থেকেই চাপে রাখার প্রস্তুতি চলছে।

তাদের দাবি, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপি অবস্থান নিয়ে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে সেটি তারা করতে পারেনি। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মীরাও মাঠে ছিলেন। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে ওই দিনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও দলের কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার মধ্যেও বিএনপির কর্মীরা সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান, যানবাহনে আগুন দেন এবং পুলিশের ওপর হামলা করেন। এ অবস্থায় আগামী দিনে বিএনপি আরও মারমুখী ও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার তাদের সভা সমাবেশে এতদিন বাধা দেয়নি। তারা এই সময় মহড়া দিয়েছে। গত কয়েক দিন আগে তারা আসল চেহারায় ফিরে এসেছে। ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে ২০১৩-১৪ সালের মতো তারা মাঠে নেমেছে। এরপর ঢাকার নিম্ন আদালত, সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে তারা তাদের বিকট চেহারা প্রকাশ করেছে। এদের প্রতিহত করতে আমরা মাঠে থাকব।

সামনের দিনে বিএনপির যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে প্রশাসনিকভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও সারা দেশের নেতাকর্মীদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচার এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে দল ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী রোববার (৬ আগস্ট) আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়।  

আর এ কারণেই এ বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। এ সভায় যারা অংশ নেবেন তারা হলেন, জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর ও উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরাই মূলত মাঠ পর্যায়ে দলের রাজনীতি পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বস্তরের দলীয় কর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন।  

এদিকে চলতি আগস্ট মাসে শোকের কর্মসূচির পাশাপাশি আন্দোলন মোকাবিলা ও নির্বাচনী প্রচারের কাজও চলবে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করা হবে। সেই সঙ্গে বিএনপি ও দলটির সমমনা দলগুলোর সরকার বিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা এবং যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রতিহত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সতর্ক অবস্থান অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। এ কারণে সেপ্টেম্বরের আগেই দলীয় প্রস্তুতিগুলো চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

এদিকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও দেশব্যাপী কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে। ইতোমধ্যে এই জোটের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার এবং আন্দোলন মোকাবিলায় সারা দেশে ব্যাপক তৎপরতা চালাবে ১৪ দল। আগস্ট মাসেও বেশ কিছু কর্মসূচি থাকছে এই জোটের। আগামী ৭ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এই মাসেই ঢাকায় মোট সাতটি সমাবেশ করা হবে বলে শুক্রবার ১৪ দলের এক সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৩
এসকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।