ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে আর ছাড় দেবে না বিএনপি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
‘নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে আর ছাড় দেবে না বিএনপি’

ঢাকা: নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি আর কোনো ছাড় দেবে না বলে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং সংলাপ দুই দিক থেকে নাকচ হওয়ায় আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তার আগে সংলাপ নাকচ করে দিয়েছি। এতে অবশ্যই অবশ্যই এবং আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী হবে আগামী নির্বাচনে যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে। আমরা আর ছাড় দেবো না, এদেশের মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

তিনি বলেন, আমি আবেগ দিয়ে কথাগুলো বলি, এই আবেগটা আমার অন্তর থেকে আসে। আমি এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। উই আর সাফার লট। নয় মাস আমরা পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার বাড়িতে কারেন্টের তার পর্যন্ত ছিল না, সেটাও লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের পৈত্রিক যে ব্যবসা ছিল, ফিলিং স্টেশন, ট্রাকের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা, সব নিয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, গত আগস্ট মাস থেকে ১৭টা মানুষ তাদের প্রাণ দিয়ে দিয়েছে। তাদের পরিবারগুলো অসহায় অবস্থায় আছে, কেন? ভাই আমাকে ভোটটা দিতে দাও। একটাই মাত্র দাবি, ভোটটা দিতে দাও। আমি আপনাদের সত্যি বলছি, আমি ২৫ বছর পাকিস্তানে বড় হয়েছি। আবারও বলবে ওই কথা আমি জানি, কাদের সিদ্দিকীও বলবে যে, পাকিস্তানের কথা বলে। এই রকম ভয়াবহ চরম অবস্থা আমরা কখনও দেখিনি। ৭১-এ দেখেছি যুদ্ধের সময়। তার আগে আমরা দেখিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার কষ্ট হয় যে, এরকম একজন বিশাল মানুষের কন্যা আমরা কেউ বলি না বলি এটা তো সত্য কথা, শেখ মুজিবুর রহমান নিঃসন্দেহে এই দেশের ওয়ান অফ দ্য গ্রেটেস্ট সান। তার মেয়ে আজকে গোটা জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনিও (শেখ মুজিবুর রহমান) দিয়েছেন বাকশাল তৈরি করে। আওয়ামী লীগের বডি কেমিস্ট্রিতে আছে, ওরা লুট করবে, ওরা ভোগ করবে, আর আমাদের পায়ের তলে পিষে মারবে।

প্রধানমন্ত্রী সংলাপ নাকচ করে দিয়েছেন, আপনারা কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও নাকচ করে দিয়েছি।

দুই পক্ষের এই অবস্থান আগামী নির্বাচনকে আরও অনিশ্চিত করে তুললো কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই। আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী হবে যদি আগামী নির্বাচনে আরও খারাপ কিছু ঘটে। আমরা আর ছাড় দেব না। এই দেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। চলেন না একদিন একসাথে বের হই, লেটস গো আউট, টক টু দ্য ফারমার, রিকশা পুলার্স। নিরপেক্ষভাবে চলেন, তদন্ত করেন, দেখেন। ওপেনলি যখন আমরা যাই, বেশির ভাগ সিএনজি ড্রাইভার, গাড়ির ড্রাইভার, রিকশাওয়ালা সবাই বলে—স্যার এগিয়ে যান, আমরা আছি। বিশ্বাস করেন, আমি এক ফোটা বাড়িয়ে বলছি না। দিস ইজ দ্য ট্রুথ, পিপল ওয়ান্ট আ চেঞ্জ। এই জিনিসটা আপনাদের বুঝতে হবে। আপনারা অনেক কিছু করতে পারেন। এই দেশে মিডিয়া যা করেছে, সব সময় মিডিয়ার জন্য এখানে পরিবর্তনটা অনেক ত্বরান্বিত হয়েছে। চিন্তা করেন এরশাদের পতনের কথা। আমি কথাগুলো আবেগের সঙ্গে বলি কেন জানেন? আমরা সব মানুষ কি চাটুকার হয়ে যাবো? সব মানুষ কি স্বার্থপর হয়ে যাবো? সব মানুষ কি নিজের স্বার্থটা ছাড়া আর কিছুই দেখবো না? সেলফ সেন্সরশিপ করতেই থাকবো? আমরা তো কয়দিন পরে মরে যাবো। ইট শ্যুড ইওর কান্ট্রি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি একটা কথা পরিষ্কার করে বলি, আপনি যখন বাড়ির মালিক হন, ইউ আর ইন চার্জ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা কাকে নিতে হয়? আপনাকে নিতে হয়। বাসার লোকজনের, ছেলে-মেয়েদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বটা কার? আপনার। আপনি যদি সেটা না দেখেন, তাহলে সেটা হবে একটা চরম বিশ্বাসঘাতকতা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা। দিস ইজ ইওর ডিউটি, যে মানুষ যেন আর সংঘাতে না যায়। আসলে ওদের কিছু যায় আসে না। ১০০/১৫০/২০০ জন মরে গেলে ওদের কিছু যায় আসে না। আমাদের যায় আসে।

নির্বাচন কমিশন আপনাদের আলোচনার জন্য ডাকলো তখন আপনারা যাননি—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশন কোন নির্বাচন কমিশন? যে নির্বাচন কমিশন কালকে বলেছে, অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনে আসলো কি আসলো না এতে আমার কোনো দায় নেই। তাকে আমি নির্বাচন কমিশন বলবো? তার কোনো দায় দায়িত্ব আছে বলবো?

জনগণের কথা চিন্তা করেও তো আপনারা আলোচনায় আসতে পারেন—জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জনগণের কথা চিন্তা করি বলেই তো দাবিগুলো করছি। আমরা তো বলছি না বিএনপিকে এখনই ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। আমরা বলছি নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করো। একটা লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করো। আমরা যেন একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সমানভাবে, সমান অধিকার নিয়ে করতে পারে, সেই জিনিসটা চাচ্ছি। উই ওয়ান্ট এ লেভেল প্লেইং ফিল্ড। আপনি একদিকে সমস্ত লোককে ধরে ধরে জেলে ঢুকাবেন, আপনি সভা-সমাবেশে আক্রমণ করবেন, মারবেন। শান্তি সমাবেশ করবেন। আর আমাকে মারতে মারতে ঢুকায়ে দেবেন। সেটা তো লেভেল প্লেইং ফিল্ড না। নির্বাচনের পরিবেশটা কোথায়? বলেন একটা পরিবেশ তৈরি করেন। ম্যাডামকে ছাড়েন, মামলাগুলো সব প্রত্যাহার করেন। পরিবেশ তৈরি করেন তখন আমাকে বলবেন যে, এখন কেন আপনারা (নির্বাচনে) যাচ্ছেন না। তার আগে আপনারা একথাগুলো বলতে পারেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।