ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সিন্ডিকেটের কব্জায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সিন্ডিকেটের কব্জায়

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি এখন হাতেগোনা কয়েকজন নেতার সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে এখন কমিটি গঠনে নেতা সংকটে একই ব্যক্তিদের বিভিন্ন কমিটিগুলোতে পদায়ন করা হচ্ছে।

এর আগে কমিটি ঘোষণার পর পরই মহানগর বিএনপি থেকে কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র করেছেন ১৫ নেতা। সম্প্রতি নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তাদের পথে যুক্ত হয়েছেন মহানগর বিএনপির আরেক যুগ্ম আহবায়ক।

জানা যায়, মহানগর বিএনপির শক্তিশালী বলয়গুলোকে মাইনাসের চিন্তা থেকে দলের আদর্শিক, ত্যাগী ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অনুগত, তোষামোদকারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এর মধ্যে এ কমিটি গঠন নিয়ে দলের কারো সঙ্গে আলোচনাও করছেন না।

দলীয় একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, মহানগর বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যদের বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়ন কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। আবার তাদের দিয়ে ওয়ার্ড কমিটির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও দলের একটা বড় সক্রিয় অংশ এখনো দলীয় কোনো পদ পরিচয় পায়নি। এর মধ্যে সর্বশেষ সদর থানা বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক, সদস্য সচিবসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের যাদের পদায়ন করা হয়েছে তারা মহানগর বিএনপির পদে রয়েছেন। আবার এ কমিটির কয়েকজনকে দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের চেষ্টাও করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুন জানান, এটিই সত্য যে এখানকার এক ব্যক্তিদের দিয়ে বিভিন্ন কমিটি করা হচ্ছে। তাদের অনুগতদের ছাড়া বাকিদের কোথাও স্থান দেওয়া হচ্ছে না। তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দল তাদের সম্পত্তি।  

তিনি বলেন, এর আগে, কমিটি পাবার পর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব আমাদের জানিয়েছিল তারেক রহমানের সঙ্গে নাকি তাদের কথা হয়েছে। তিনি তাদের বলেছেন দলে আর কেউ না থাকলেও যদি শুধু সাখাওয়াত ও টিপু দুজন থাকেন তাহলেই চলবে। আর কারো নাকি দলে প্রয়োজন নেই, তারা থাকলে থাকবে না থাকলে নেই। পরে আমি নানা মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি আমাদের নেতা এরকম কোনো কথা বলেননি। দলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে তারেক রহমানের নাম বিক্রি করে চলেছেন তারা।  

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুন বলেন, আমরা তো দলের কাজ করি কারো ব্যক্তিগত কাজ করি না। দলের যেকোন কর্মসূচিতে চেয়ার থেকে মাইক, কে বক্তব্য দেবেন, কে কি করবেন, কাকে কোন পদ দেবেন এগুলো দুজন ঠিক করেন। এখন পর্যন্ত দলের সবাইকে নিয়ে তারা বসতে পারেনি। সবাইকে তারা ফোনও দেয়নি এখন পর্যন্ত। দলের কমিটির জন্য নানা ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে এবং নানা সময় নেয় এগুলো সবাই বলে। তারা দলের নেতাকর্মীরা আমিসহ যারা ১০ ডিসেম্বরের আগে মামলায় আসামি হয়েছি সবার জামিন ও আইনি সহায়তার কথা বললেও মূলত আমিসহ কয়েকজন অর্থ ব্যবস্থা করেছি। বাকিটা দলের কেন্দ্র থেকে এক কেন্দ্রীয় নেতার মাধ্যমে দিয়েছে বলে শুনেছি। তারা কারো মামলাও বিনামূল্যে করেনি। দুইজন দলকে শেষ করে দিচ্ছেন, আর তাই আমার নেতা তারেক রহমান যেমন রিভোল্ট করেছিলেন আমিও আমার দলে প্রতিবাদ করেছি। কারণ আমার দলেই যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে কিসের গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করবো।

জানা যায়, দিন দিন মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে কমছে নেতাকর্মীর সংখ্যাও। আর তাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো ও যেসব কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আসেন সেসব কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের এনে লোক দেখানো হয়।  

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা ওলামা দলের সভাপতি মুন্সী শামসুর রহমান বেনু ও নিহত যুবদল নেতা শাওনের জন্য দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠান শেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মহানগর বিএনপির নবগঠিত ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ১৫ নেতা।  

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন- মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সর্বশেষ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী নুরুদ্দিন, আতাউর রহমান মুকুল, আবুল কাউসার আশা, সদস্য অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম রিপন, আমিনুল ইসলাম মিঠু, মনোয়ার হোসেন শোখন, ফারুক হোসেন, হাজী ফারুক হোসেন, হান্নান সরকার, আওলাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু।  

এ ছাড়াও কমিটির আরও কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতি কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুন সম্প্রতি ফুল দিয়ে বিদ্রোহীদের বলয়ে যুক্ত হয়েছেন।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। কমিটি ঘোষণার পরেই শুরু হয় বিদ্রোহ। অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে বাদ দেওয়া হয়েছে রাজপথের নেতাদের ও বিএনপির প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
এমআরপি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।