ঢাকা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতা এখন নিষ্ক্রিয়। গড় বয়স ২৯ এর বেশি হয়ে যাওয়াই নেতাদের এ নিষ্ক্রিয়তার প্রধান কারণ।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। দুই বছরের জন্য এই কমিটি গঠিত হয়। অথচ সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনে ক্যাম্পাসে বা কর্মসূচিতে দেখা না গেলেও রাতে মন্ত্রিপাড়ায় ও এমপি ফ্যাটে নিয়মিতই উপস্থিত থাকেন নিষ্ক্রিয় নেতারা। দল ক্ষমতায়, তাই অর্থ উপার্জনের জন্য মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতেই ব্যস্ত তারা। নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই জড়িত শেয়ার ব্যবসায়।
কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধশতাধিক নেতাকে ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখাই যায় না। মাঝেমধ্যে তাদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এলেও দলীয় মিছিল-সমাবেশ বা অন্য কোনো কর্মসূচিতে থাকেন না। আবার কেউ কেউ মিছিল করেই ক্যাম্পাস ছাড়েন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৬৭ জন সহ-সভাপতির মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ জন নিয়মিত আসেন। যুগ্ম-সম্পাদকের পদ আছেন ৭ জন। এর মধ্যে সক্রিয় ২ জন। ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে নিয়মিত ২ থেকে ৩ জন। আর ২৮ জন সম্পাদকের মধ্যে ক্যাম্পাসে দেখায় ৫ থেকে ৬ জনকে।
সোহেল রানা টিপু ও সাজ্জাদ সাকিব বাদশা দু’জনই হলে থাকেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে নিয়মিত আসেন না।
নিষ্ক্রিয় বেশ ক’জন নেতা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নিষ্ক্রিয় নই। কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই নেতা আমাদের কোনো কাজে ডাকেন না। তাই যাওয়া হয় না। ’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনও দলীয় কর্মকা-ে কম সময় দেন।
তারা মাসে দু’একবার ক্যাম্পাসে আসেন বলে কর্মীরা অভিযোগ করেন।
সভাপতি ধানমন্ডির শংকরে নিজ বাসায় অথবা ২৭ নম্বর সড়কে শর্মা হাউসে সন্ধ্যায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে থাকেন। সাধারণ সম্পাদকও নীলক্ষেতের বাসায় কর্মীদের সাক্ষাৎ দেন। গত চার বছরে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ দিন তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসেছেন। অথচ লিয়াকত-বাবুর নেতৃত্বাধীন বিগত কমিটির সময় নেতাকর্মীদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল দলীয় কার্যালয়ে।
অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার নিষ্ক্রিয়তার কারণে সংগঠনের নিয়মিত কর্মসূচিও পালিত হয় না। আগস্টে শোকের কর্মসূচি পালিত হওয়ার পর ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনে আনন্দ মিছিল ছিল তাদের একমাত্র কর্মসূচি। সেখানেও ছাত্রলীগ নেত্রীদের মধ্যে চুলোচুলি হয়।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মাসে কার্যকরী কমিটির অন্তত একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অথচ দলের প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ- সভা আহ্বান তো দূরে থাক, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের মতামত নেন না।
সারাদেশে সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি গঠনের জন্য একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদের মতামত উপেক্ষা করেই কমিটি গঠিত হচ্ছে।
সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সংঘর্ষ ও টেন্ডারবাজির এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমেদ হোসেন ও বিএম মোজাম্মেল হককে ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্ব দেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক ছাত্রলীগের সম্মেলন সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, ‘জেলা কমিটি সম্পন্ন হলে নতুন কমিটি দেওয়া হবে। গতবারের মতো এবারও ২৯ বছরের বেশি বয়সী নেতারা কমিটিতে ঠাঁই পাবেন না। ’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী বলেন, যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে গণমাধ্যমই ছাত্রলীগের ভাবর্মূতি নষ্ট করেছে।
সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের মতো সংগঠন নয় যে সম্মেলন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে হবে। সময় হলে সবাইকে জানানো হবে। ’
এর আগে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক জুন মাসে সম্মেলনে কথা বলেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ছাত্রলীগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে তিনি (নানক) কে?
সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্মেলন হবে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় ১৫৫৮ ঘন্টা সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১০