ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অন্যান্য খেলা

জার্নি বাই ট্রেন

পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা-অন্ধ্রপ্রদেশ-ব্যাঙ্গালুরু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা-অন্ধ্রপ্রদেশ-ব্যাঙ্গালুরু ছবি: সংগৃহীত

মহিশুর এক্সপ্রেস থেকে: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের সুপার টেনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমি এবং আমার সহকর্মী শোয়েব মিথুন ব্যাঙ্গালুরুর পথে। সঙ্গে আরও আছেন ইংরেজী দৈনিক দি ডেইলি স্টারের সিনিয়র ফটোগ্রাফার ফিরোজ আহমেদ ও দৈনিক সকালের খবরের সিনিয়র ফটোগ্রাফার আতিকুল ইসলাম আলিম।



শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে মহিশুর এক্সপ্রেস যোগে আমাদের দিনের যাত্রা শুরু করেছি। বিকেল চারটা ১০ মিনিটে মহিশুর এক্সপ্রেসটি ছুটে চলতে থাকে ব্যাঙ্গালুরুর পথে। ট্রেনটি যখন ব্যাঙ্গালুরু গিয়ে থামবে তখন বাংলাদেশ সময় হবে (২০ মার্চ) রাত ১২টা।

ব্যাঙ্গালুরু যেতে হলে আমাদের অতিক্রম করতে হবে পশ্চিম বঙ্গ, উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ। এই তিনটি প্রদেশ পার হলে পরেরটি তামিলনাড়ু, যার মধ্যে পড়েছে ব্যাঙ্গালুরু। ব্যাঙ্গালুরু তামিলনাড়ুর একটি জেলা। আর এখানেই ২১ মার্চ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এবং পরেরটিতে ২৩ মার্চ স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে টিম বাংলাদেশ।

ব্যাঙ্গালুরু যেতে আমাদের সর্বসাকুল্যে সময় লাগবে ৩২ ঘণ্টা! তাই কলকাতা থেকেই পরিকল্পনা ছিল এসি স্লিপিং কেবিন নেয়ার। কাজও হলো সেই অনুযায়ী। মহিশুর এক্সপ্রেসের বি-ফোর কম্পার্টমেন্টের ৫৬, ৬১, ৬২ ও ৬৩ নম্বর আসনে চেপে আমরা ছুটে চলেছি।

আমাদের কম্পার্টমেন্টটিতে যাত্রীর সংখ্যা মোট আটজন। আমরা ছাড়াও আছেন ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী আর কেউবা গৃহিনী।

ট্রেনটির গতি বেশ ভালোই। ঘণ্টায় ৬৯ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে তার গন্তব্যের দিকে। ভেতরে ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থাও আছে বেশ ভালোই। কিন্তু স্বাভাবিক ঘুমটি ঘুমাতে পারছিনা। একেতো ট্রেনের ঝাঁকুনি আর সাথে ক্যানন ওয়ান ও সেভেন ডি এক্স আর ফাইভ হান্ড্রেড প্রাইম লেন্স’র মতো দামী দামী সব যন্ত্রপাতি। ঘুমিয়ে পড়লে চুরি হয়ে যেতে পারে এই ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছিনা। বিশেষ করে পারছেন না বাংলানিউজের সিনিয়র ফটোগ্রাফার শোয়েব মিথুন।

সব ক্যামেরা ও লেন্সের ব্যাগ একসাথে পায়ের কাছে নিয়ে তিনি জেগে আছেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। তবে আমাদের ফিরোজ ভাই (ফিরোজ আহমেদ) ইতোমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার নাক ডাকার শব্দে আমাদের কম্পার্টমেন্টের অনেকেই আধো ঘুমিয়েও লাফিয়ে জেগে উঠছেন! আহ! কী সুখী মানুষ! ফিরোজ ভাই ঘুমাচ্ছেন শুনে এ কথা ভাবার কোন কারণ নেই যে, তিনি ঘুমাতেই থাকবেন। তার এখন শিফটিং ঘুম চলছে। তিনি জেগে উঠলে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবেন আমাদের প্রিয় শোয়েব মিথুন।

আর আমি, ট্রেনে উঠেই শেষ বিকেলের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে, ঘুমটি দীর্ঘ করতে পারিনি কেননা আমার ঠিক চোখের উপরই দু-দুটি লাইট জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল।

আধো ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম ২০ বছর বয়সী এক তরুণ। নাম ‘রাম’। মেদেনিপুর কলেজে ব্যাচেলর ডিগ্রী পড়ছেন। কেন যানি আমাকে দেখে কথা বলা শুরু করলেন তিনি। আর তার কথায় সায় দিতে গিয়ে বেশ ভালো সম্পর্কও গড়ে উঠলো। আমাদের সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছেন। আর প্রয়োজনে তথ্য দিয়েও আমাকে এই প্রতিবেদন তৈরির কাজে সাহায্য করছেন। রাম অবশ্য যাচ্ছেন ভেলরে। আর তার যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো, প্রতিবেশিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া।

ট্রেনের মধ্যে সবই ঠিক আছে। আমরা বাংলাদেশি শুনে কেউ আমাদের অবজ্ঞা করছেন না বা অন্যভাবে দেখছেন না। বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশের মধ্যদিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি গন্তব্যের দিকে।

ট্রেনের মধ্যে ঘুমাতে পারছিনা তাই কী করবো? ভাবলাম একটু লিখতে বসি। কম্পার্টমেন্টের আলো জ্বালাতে পারছি না তাই আরেক কম্পার্টমেন্টের মৃদু আলো আর অন্ধকারের মধ্যে লেখার কাজ চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। আর লেখার ফাঁকে বাইরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু দূরের কোনো গ্রামের বা শহরতলীর জ্বলে থাকা একগুচ্ছ বা দু’ একটি লাইটের আলো আর রেলের বড় বড় স্লিপার রেলের সিগন্যালের আলোতে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। কোথাও কোথাও ছোট ছোট লাইটের আলোর বিচ্ছুরণ দেখে মনে হচ্ছে জোনাকি পোকাদের যেন দরবার বসেছে।

এমন মোহনীয় সব দৃশ্যের মধ্যদিয়েই আমাদের রাতের ট্রেনটি ছুটে চলেছে চলবে আগামী ১ দিনেরও বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ১৯ মার্চ ২০১৬
এইচএল/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।