ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

একুশে পদক, মনসুর খান ও দুটি কথা

আদনান সৈয়দ, নিউইয়র্ক থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২

যদি বলা যায় পদকে কি আসে যায়? তাহলে কথাটা খুব একটা মিথ্যে বলা হবে না। একজন মানুষ বেঁচে থাকেন তার কাজে আর সৃষ্টিতে।

১৯৬৪ সালে ফরাসি সাহিত্যিক এবং দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রে সাহিত্যের সর্বোচ্চ খেতাব নোবেল পুরস্কার বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু তাতে দার্শনিক এবং সাহিত্যিক সার্ত্রের কিছুই যায় আসেনি।

একটি পদকই একজন শ্রেষ্ঠ মানুষের স্বীকৃতির শেষ সীমানা হবে এ কথা আমরা মানতে রাজি নই। তবে মানুষের মহৎ কাজগুলোকে আজীবন স্মরণীয় করে রাখার জন্য চাই এর উপযুক্ত স্বীকৃতি, চাই কৃতজ্ঞতা এবং সম্মাননা জানানোর উপযুক্ত আয়োজন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি স্মরণে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক চালু হয়। বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংস্কৃতি এবং শিক্ষার প্রসার এবং উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ এই সম্মাননা।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭৬ সালে সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল এবং ইব্রাহিম খাঁ। শিক্ষায় পেয়েছিলেন বিজ্ঞানী কুদ্রত-ই-খুদা। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে একুশে পদক পান কবি শামসুর রাহমান ও আবদুল গাফফার চৌধুরী। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য একুশে পদক লাভ করেন নিউইয়র্ক প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী।

২০১১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ঠিক এই সময়ে যখন শুনতে পেয়েছিলাম যে আমাদের নিউইয়র্ক প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী একুশে পদকে ভুষিত হয়েছেন তখন সেই খুশিতে আমাদের বুক গর্বে উঠেছিল। এ বছর ঠিক একই রকমের আরেকটি সংবাদ। নিউইয়র্কের খান টিউটোরিয়ালের মালিক মনুসর খান (মনসুর আলম খান) এবার শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।

সত্যি বলতে এরকম একটা তাজা গরম খবর শুনে আমার মত অনেক প্রবাসীদের আনন্দে গলাগলি করে নেচে ওঠারই কথা। কিন্তু কই? বরং খবরটা শুনে আমাদের নিউইয়র্কের সবারই মুখ যেন ত্যাড়া-ব্যাঁকা হয়ে গেল। ‘খান টিউটোরিয়ালের খান পেয়েছেন একুশে? মিয়া ঠাট্টা করার জায়গা পান না!’

আমাদের ভাষা এবং শিক্ষায় কি অবদান রেখেছেন মি. খান? জানতে পারি কি? কি তার সেই মহান অবদান যে কারণে একজন টিউটোরিয়ালের মালিক এবার একুশে পদকের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদকটি পেলেন? বাংলা ভাষা এবং এর শিক্ষা বিস্তারে খান তার কোচিং সেন্টারটির মাধ্যমে কি সেই মহৎ কর্মগুলো করেছেন, খুবই জানতে ইচ্ছে করে। বাঙালি গরীব এবং মেধাবী  ছাত্র-ছাত্রীরা খান টিউটোরিয়াল থেকে বিনামুল্যে বা নামমাত্র টিউশন ফি দিয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ কখনো পেয়েছেন কি?

নিউইয়র্কের মতো এই পাথুরে মাটিতে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির লালন পালনে এবং রক্ষণাবেক্ষণে মনসুর খানের অবদানের কথা জানা যাবে কি?
 
আবারও পরিস্কার করে বলি এই লেখাটা একুশে পদকে ভুষিত মনসুর খানের বিরুদ্ধে কোনো লেখা নয়। তার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি ১৯৭৬ সালে শিক্ষার জন্য একুশে পদক পেয়েছিলেন কুদরৎ-ই-খুদা আর ২০১২-তে শিক্ষার জন্য পদক পেলেন নিউইয়র্কের খান টিউটোরিয়ালের প্রধান মনসুর আলম খান। একুশে পদকের মতো একটি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের তাহলে এই দশা?

লেখক: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।