ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

‘ডোরিয়ান’ মোকাবিলায় ফ্লোরিডায় বাংলাদেশির অভিজ্ঞতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯
‘ডোরিয়ান’ মোকাবিলায় ফ্লোরিডায় বাংলাদেশির অভিজ্ঞতা ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে লেবার ডের সাধারণ ছুটি সোমবার (২ সেপ্টেম্বর)। এর সঙ্গে ফ্লোরিডায় যুক্ত হয়েছে ইমারজেন্সি ছুটি। কারণ, এখানে শক্তিশালী হারিকেন ডোরিয়ান আঘাত হানতে বসেছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ধারণা করেছিল, এটি সরাসরি ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় (অরল্যান্ডো ও জ্যাকসনবেলে উপকূলে) ব্যাপক শক্তি নিয়ে (ক্যাটাগরি পাঁচ, গতিবেগ প্রায় ২৫০ কিমি/ঘণ্টা) আঘাত হানতে পারে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আটলান্টিকে উৎপত্তি হওয়া এ ঘূর্ণিঝড় এরই মধ্যে গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন করেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও কিছুটা কমেছে বলা যায়। ঘূর্ণিঝড়টি এখন দক্ষিণ ক্যারোলিনার দিকে কিছুটা টার্ন করেছে। তবে মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) হারিকেন ডোরিয়ানের প্রভাব এখানে পরিলক্ষিত হবে।

গত রোববার হারিকেনটি ফ্লোরিডা দূরবর্তী বাহামা দ্বীপে আঘাত হেনেছে। তখন সেটি ছিল ক্যাটাগরি চার মাত্রার (গতিবেগ প্রায় ২০০ কিমি/ঘণ্টা)।

বাহামাতে প্রায় ১৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত পাচঁজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ানের গতিপথ।  ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, হারিকেন ডোরিয়ানের গতিবেগ একেবারে কমে গিয়ে (প্রায় দুই কিমি/ঘণ্টা) ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। তবে, যেকোনো সময় এটি আবার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। মোবাইল ফোনে বারবার ডোরিয়ান সর্ম্পকে সতর্কবার্তা আসছে। তাই, প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।

ফ্লোরিডার সেন্ট অগাস্টিনে এখন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে আর বাতাস বইছে জোরে। এই অন্ধকার হয়ে আসছে, আবার আলো ফুটছে। ফ্লোরিডার প্রায় সবখানে রেডঅ্যালার্ট চলছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে। সাধারণ দোকান থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই বন্ধ। শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, ব্যাংক, জাদুঘর, স্কুল, কলেজ, অফিস সবকিছু বন্ধ। বিমানের লোকাল ফ্লাইটগুলোতে চলছে রেডঅ্যালার্ট। শুধু আবহাওয়া অফিসগুলো খোলা, চলছে ব্যাপক প্রস্ততি।

স্থানীয় প্রশাসন এখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। মানুষজন ইতোমধ্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

বাহামায় ঝড়ের আগে ও পরের চিত্র।  ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) থেকেই মানুষ উপকূলীয় এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। চার-পাঁচদিনের জন্য সবাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিশেষ করে সবজিবাজার, খাবার পানি, ওষুধপত্র, শুকনো খাবার (রুটি/ক্র্যাকার্স) আগাম কিনে রেখেছে। মানুষ তাদের থাকার ঘরগুলো বাঁচাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। মোটা প্লাস্টিক বা পাতলা কাঠ দিয়ে জানালা গুলো সেঁটে দেওয়া হয়েছে। দরজার সামনে বালির বস্তা দিয়ে প্রোটেকশন দিয়েছে। অফিসগুলোতেও দেখা গেছে আগাম প্রস্তুতি।  

ধারণা করা হচ্ছে, এ হারিকেনের প্রভাবে ব্যাপক বন্যা হবে। তাই সবার এমন আগাম প্রস্তুতি।  

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, ফ্লোরিডায় প্রায় প্রতিবছরই এ ধরনের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ যেন এক ঘূর্ণিঝড়ের রাজ্য। এতে লোকজনও অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে, তাদের প্রস্তুতি ও প্রশাসনের তৎপরতা সত্যি চোখে পড়ার মতো। প্রকৃতি কতো শক্তিশালী, অথচ এরা এর সঙ্গেই সুন্দরভাবে মানিয়ে চলছে।

লেখক
বিজ্ঞানী ও গবেষক, অ্যানাসটাশিয়া মসকিটো কন্ট্রোল, সেন্ট অগাস্টিন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র।
সহযোগী অধ্যাপক (ডেপুটেশন), পবিপ্রবি, বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।