ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

নারী নির্যাতন ও নারীর ক্ষমতায়নের ভন্ডামী

আহমেদ আরিফ, পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১১
নারী নির্যাতন ও নারীর ক্ষমতায়নের ভন্ডামী

একটা সময় ছিল অনলাইনে আসলে শুরুতেই প্রথম সারির কয়েকটি বাংলা ব্লগ ওপেন করতাম। ইদানিং অনলাইনে আসলে প্রথম বাংলানিউজ২৪ সহ বেশকিছু নিউজ সাইট ওপেন করি।

প্রতিদিনকার মত আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। বাংলানিউজ২৪ ওপের করেই যে ছবিটি আমাকে রীতিমত স্তব্দ করে দিয়েছে সেটি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর জেলা প্রতিনিধি মুনিরুজ্জামান খান চৌধুরীর পাঠানো। `

বিয়ের ১২ দিনেই স্বামীর এসিড মরিয়মের গায়ে` শিরোনামের সংবাদটি পুরোটি পড়ে রীতিমত স্তব্দ হয়ে গেছি। একজন স্বামী যে কিনা পূর্বে প্রেমিকও ছিল সে কিনা গর্ভবতী বউয়ের গায়ে চেপে ধরে এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে । প্রতিনিয়ত মিডিয়ায় আসছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। প্রতিদিনকার সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে থাকে ধর্ষন, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া।

প্রিয় পাঠক চলুন দেখে আসি অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে নারী নির্যাতন কতটা ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। প্রথমেই দেখি ২০১০ সালের নারী নির্যাতনের চিত্র। না বিএনপি কিংবা জামায়াত পন্থী কিংবা আওয়ামীপন্থী  কোন পত্রিকার তথ্য নয় সুপ্রিম কোট ২০১০ সালে বিচারাধীন নারী নির্যাতনের যে মামলা প্রকাশ করেছে তাতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৬৬হাজার ৮১৭টি । ২০১১ সালে জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যা এসে দাড়াঁয় ৭৩হাজার ৮৫১টি ।

সংসদে দাড়িঁয়ে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিগত অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে দেশের আইন শৃঙ্খলা ভাল বলে সংসদকে যে তথ্য দিয়েছিলেন তা ২০১০ সালে একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্টমন্ত্রী সংসদকে জানান -২০১০ সালের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত দেশে সংগটিত পৃথক ১১টি বিষয়ে সারাদেশে ১৭ হাজার ৫৭৭টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে নারী নির্যাতন, যা ৭ হাজার ২৮৫টি। খুন হয়েছে ১ হাজার ৯৫১টি আর ১ হাজার ৫৮৬টি হয়েছে ধর্ষণের ঘটনা! এসিড নিক্ষেপ: ২০১০ সালে মোট ৯৩টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনা প্রতিয়মান হয়েছে। তবে মামলা হয়েছে ৩৯টি। পারিবারিক নির্যাতনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে বলেও জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র। ৯৩ টি ঘটনার ২১টিই পারিবারিক কলহের জের ধরে।

আর ১৯ থেকে ২৪ বছরের ১৭ জন নারীদেরকে এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়েছে।

পাঠক চলুন এবার দেখি ২০১১ এর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নারী নির্যাতনের চিত্র।

যৌন নির্যাতন

এই ছয় মাসে মোট ৩৪৫ জন নারী যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন। এঁদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন, নিহত ১ জন, আহত ৩৫ জন, লাঞ্ছিত ৫৯ জন, অপহরণ ৮ জন, ধর্ষণের অপচেষ্টার শিকার ৯ জন নারী।

ধর্ষণ

জানুয়ারি - জুন এই ছয় মাসে মোট ২৯৭ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এঁদের মধ্যে ১০৩ জন নারী, ১৯১ জন মেয়ে শিশু এবং ৩ জনের বয়স জানা যায়নি। উক্ত ১০৩ জন নারীর মধ্যে ৩৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৫৭ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

যৌতুক সহিংসতা

জানুয়ারি-জুন এই ছয় মাসে ২০৫ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১৩৭ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে, ৫৭ জন বিভিনড়বভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ১১ জন আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে

এসিড সহিংসতা

জানুয়ারি - জুন এই ছয় মাসে ৫৫ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৩০ জন নারী, ১৬ জন পুরুষ, ৪ জন বালিকা ।

দুই হাজার ১০সালে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের  সাময়িকী ‘গ্ল্যামার’র বিচারে বর্ষসেরা নারী মনোনীত হয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বর্ষসেরা নারী নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী তার শাসনামলের নারী নির্যাতনের চিত্র দেখে  যে প্রশ্নটি সামনে এসে যায় এমন  নারীর ক্ষমতায়নের কি মূল্য আছে? যে ক্ষমতায়ন নারীর প্রতি সহিংসতা বিন্দুমাত্র রোধ করতে পারছে না। নারীর ক্ষমতায়নের নামে রাজনীতিক ভন্ডামীর মাধ্যমে  ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কি হচ্ছে? যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি আসন আছে সে দেশে উপরে নারী নির্যাতনের যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে নারীর ক্ষমতায়নের মূলাকে রাজনৈতিক ভন্ডামী ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?

এই দেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী। বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাড়ির জন্য হরতাল হয়; দূনীতিবাজ ছেলেদের জন্য হরতাল, মিটিং মিছিল , সমাবেশ হয় কিন্তু নারী নির্যাতনের প্রতিবাদী, নির্যাতিত নারীদের জন্য পাশে দাঁড়ানোর সময় নেই। কিন্তু জম্মদিনে ৬৫ পাউন্ডের কেক কাটা হয়!

এই দেশে মাওলানার অভাব নেই। শীত আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে ওয়াজের মৌসুম। সারারাত ধরে মাওলানারা আড়ালে থাকে নারীদের হেদায়েত করবেন কিভাবে স্বামীর সেবা করা যায়। অথচ ইসলাম যে নারী নির্যাতনকারীদের ব্যাপারে কঠোর সে ব্যাপারে মাওলানাদের কয়েক লাইন বের করতে কষ্ট হয়।

৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকি হানাদার ও তাদের এদেশি দোসররা নারী নির্যাতন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের ৪০বছরে স্বাধীন দেশের প্রায় ২৫ লাখের বেশী নারী নির্যাতিত হয়েছে। ৭১এর পাক হানাদাররা যদি রাজাকার হয় তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের নারী নির্যাতনকারীরা কি? তাদের কি জন্য কি রাজাকার উপাধি যথেষ্ট এই প্রশ্ন আমি করবো না পাঠকের বিবেকের উপরই ছেড়ে দিলাম।
[email protected]

বাংলাদেশ সময় ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।