ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

রুশদেশের রোমিও-জুলিয়েট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
রুশদেশের রোমিও-জুলিয়েট রাশিয়ার বলশই থিয়েটার

ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা, আকুলতা, উদগ্রীবতা, উচ্ছ্বাস, অভিলাস মানুষকে সঞ্চালিত করে। বলতে গেলে হাজারও কষ্ট-যন্ত্রণা ব্যথা-বেদনা ভালোবাসা ভুলিয়ে দেয় এক নিমিষেই। তাই চিরন্তনভাবে মানুষ ভালোবাসা খোঁজে, খুঁজে বেড়ায় অনাবিল প্রশান্তি।

এক ভালোবাসার জন্য জন্ম হয়, আবার সেই এক ভালোবাসার জন্যই মৃত্যু। সব কিছুতেই ভালোবাসা অন্তর্নিহিত।

কেউ ভালোবাসায় সুখ পায়, আবার কেউ ভালোবাসা না পেয়েও কল্পনায় ছবি এঁকে ভালবাসার সুখ খোঁজে।

রোমিও-জুলিয়েটদের কোনো দেশ নেই। রোমিও-জুলিয়েটরা সব দেশের, সব কালের, সব বেলার। ভালোবাসায় জাতি-বর্ণ-ধর্মে কোনো ভেদাভেদ নেই। ভালোবাসা সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে, দেশ-প্রান্তর পেরিয়ে সর্বত্র সার্বজনীন। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের প্রাক্কালে দেখতে গিয়েছিলাম জগৎ বিখ্যাত রোমিও-জুলিয়েট নৃত্যনাট্য রাশিয়ার ঐতিহাসিক বলশই থিয়েটারে।
রাশিয়ার বলশই থিয়েটার
রোমিও-জুলিয়েট ব্যালে নৃত্য নিঃসন্দেহে বিশেষ উপলক্ষ। ব্যালে ড্যান্স হলো কোনো কাহিনী অবলম্বন করে ব্যালে শিল্পীদের নৃত্যনাট্য।

কেউবা ভালোবাসার ভিখারি, তা না পাওয়ায়। আর অনেকের অপেক্ষা ভালোবাসা পাওয়ার। পক্ষান্তরে অনেকে আবার ভালোবাসা সঞ্চয়ী ভবিষ্যতের আশায়। ফুলের সার্থকতা সৌন্দর্য ও গন্ধ ছড়িয়ে, তেমনি মানুষের মনের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ তার ভালোবাসায়। সুন্দর যার মন সুন্দর তার ভালোবাসা।

যুগান্তরের পালাক্রমে রোমিও-জুলিয়েটরা অবিনশ্বর। ভালোবাসা সে তো সংজ্ঞাহীন আবার বহুরূপী। ভালোবাসা কেবলই স্বপ্ন, কল্পনার ধূম্রজাল। সেই ভালোবাসা কবি খুঁজে পায় তার কবিতায়, শিল্পী তার শিল্পে। তেমনি ব্যালে নৃত্য এক অনন্য অসাধারণ শৈল্পিক আবহ-মূর্ছনা। রোমিও-জুলিয়েট ব্যালে নৃত্য কি যেন এক মোহ, নৃত্যের কারুকার্য, ছন্দ-লয়-তালের যুগপদে ফুটিয়ে তুলেছিল ভালোবাসাকে। যেন এক অভিভূত মনোমুগ্ধকর আবহ সংগীত, নৃত্যনাট্য।

যথারীতি বলশই থিয়েটারের টিকিট দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়সাধ্য। ছাত্রদের জন্য তা সবসময় নাগালের বাইরে। তাই বলে কি জীবনের এই সেরা সময়ে, ভালোবাসার স্বর্ণযুগে তা কি অধরাই থাকবে? না! তা কি করে হয়।   তবে আশার বাণী হলো ছাত্রদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। রাশিয়ায় আসার পর থেকে বলশই থিয়েটারের প্রতি একটি ইল্যুউশন তৈরি হয়েছিল। আকাঙ্ক্ষার পারদ চাপ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অবশেষে রোমিও-জুলিয়েট দেখার মাধ্যমে কল্পনার রাজ্যে স্বপ্নের বাস্তব বিচরণ।

রাশিয়ার বলশই থিয়েটারবলশই থিয়েটারের বর্ণনা লেখনীর মাধ্যমে দেওয়া নিতান্তই মরীচিকা। যার রূপ ও চাকচিক্য একবার গমনে পিপাসাতৃপ্ত। জীবনে দ্বিতীয়বার আর প্রয়োজন নেই। ঐতিহাসিক এ থিয়াটার রুশজাতির শীর্ষ ও গৌরবের প্রতীক। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভদ্রতার কাদর্য সত্যিই নম্র ও বিনয়ী। বলশই থিয়েটারে ঐতিহাসিক হলের কারুকাজ অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্বলিত। এ থেকে স্পষ্ট যে, কোনো জাতি তার ভাষা, সাহিত্য- সংস্কৃতিতে যত সমৃদ্ধ, সে জাতি সত্যিকার অর্থেই তত বেশি গর্বিত।


রোমিও-জুলিয়েটের গল্প জানে না, এমন মানুষ মেলা ভার। কিন্তু লিখিত গল্প কিংবা অভিনীত চিত্রনাট্য ছাড়াও যে নৃত্যনাট্যের ভাষায় প্রকাশ করা যায় মনের ভাষা, ভালোবাসা তা চক্ষু-কর্ণে না দেখলে-শুনলে হয়তো অজানাই থাকত। নৃত্যও যে মনের ভাষা প্রকাশ করে তা সত্যিই অনিন্দ্য সুন্দর। ক্ষেত্র বিশেষে যেমন ভালোবাসার জন্য ভাষার প্রয়োজন হয় না, তেমনি নৃত্যের ভাষায় বলে দেওয়া যায় ভালোবাসার কথা। রোমিও জুলিয়েটের সঙ্গে নৃত্যের মাধ্যমে পরিচয়, নৃত্যের সাহায্যে ভালোবাসা বিনিময়, অভিসার, প্রণয় আর এই নৃত্যের মাধ্যমেই পরিণতি। মরণে যদি ভালোবাসা সার্থক হয়, যদি পূর্ণতা পায় তবে সে মরণ ভালোবাসার মরণ নয়। মরিয়া ভালোবাসা পরিস্ফুটিত হলো।

কবি কল্পনাকে আঁকড়ে ধরে, মায়াবীকে ভালোবেসে অতিবাহিত করেছেন অসংখ্য বসন্ত। আর তাদের জন্য শুভকামনা যারা সেই বসন্তের প্রতীক্ষায়। কে হবে আমার বাসন্তী, ভ্যালেন্টাইন!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।