ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা-গ্লুকোমা চিকিৎসায় ‘আশার আলো’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা-গ্লুকোমা চিকিৎসায় ‘আশার আলো’ ছবি- প্রতীকি

আলো-তা সে যত ক্ষীণই হোক না কেন, তার প্রদীপ শিখা ক্রমবর্ধমানহারে প্রজ্জ্বলিত হলে অন্ধকারে আলোর দিশা দেখাতে পারে।

রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, মেকিউলার ডিজেনারেশন অথবা গ্লুকোমার কারণে যারা চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেলছেন তাদের জন্য এ লেখা ‘আশার আলো’ হয়ে উদ্ভাসিত হবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, মেকিউলার ডিজেনারেশন কি এবং এর ফলে দৃষ্টিশক্তির কি ক্ষতি হয়  তা একটু বলা দরকার।

চোখের অভ্যন্তরে রেটিনা নামক একটি পাতলা মেমব্রেন থাকে, যার প্রধান দুটি অংশ রড ও কোণ। এ রড ও কোণ ফটো  রিসেপ্টরের  ভূমিকা পালন করে এবং দৃষ্টিসীমায় গৃহীত বস্তুর  তথ্য মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক সে তথ্য ফেরত পাঠানোর পর মানুষ তা দেখতে পায়।

রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার  কারণে কারো কারো ফ্লুইড জমে রেটিনার ওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার  কারো রেটিনার ওয়ালে পিগমেন্টেশন তৈরি হয়। এভাবে যাদের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ফটো রিসেপ্টর উল্লেখিত সেলদ্বয় সম্পূর্ণভাবে দেখা  জিনিসের তথ্য মস্তিষ্কে পাঠাতে পারে না। ফলে রেটিনার ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ব্যতিত মস্তিষ্ক যেটুকু তথ্য পায় চোখ শুধু সেটুকুই দেখতে পারে।

একেই বলে রেটিনাইটিস  পিগমেন্টোসা। এর ফলে আক্রান্ত রোগী ক্রমান্বয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকে। এ রোগে সাধারণত পেরিফেরিয়াল দৃষ্টি হ্রাস পেয়ে কেন্দ্রীয় দৃষ্টির দিকে হ্রাস পেতে থাকে। আবার কারো বা এর ঠিক বিপরীতটা ঘটে অর্থ্যাৎ কেন্দ্রীয় দৃষ্টি হ্রাস পেয়ে পেরিফেরিয়াল দিকে ক্রমশ  দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। অনেকে আবার রাতে কম দেখে থাকে।

রেটিনার ফটোরিসেপ্টর সেল দুটির রড অংশটি পেরিফেরি দৃষ্টি এবং রঙিন জিনিস দেখতে সাহায্য করে। অপরদিকে কোণ অংশটি কেন্দ্রীয় অংশ দেখতে সাহায্য করে যার মাধ্যমে লেখাপড়া,চেহারা কিংবা গাড়ী চালনায় সাহায্য হয়। আবার যাদের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি হ্রাসপায় এই রোগের কারণে অথবা তা বয়সজনিত কারণেও হতে পারে তাকে বলে বয়সজনিত মেকিউলার ডিজেনারেশন।

এই রোগীরা চেহারা দেখতে পারে না বা লেখাপড়াও করতে পারে না। পারলেও তা স্বচ্ছভাবে করতে পারে না। এই রোগটি পারিবারিক  সূত্র থেকে পাওয়া জেনেটিক মিসম্যাচ এর ফলে হয়ে থাকে বলে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

অর্থ্যাৎ মানুষ জেনেটিক্যালি যে ২৩ জোড়া বিভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলী সম্পন্ন ক্রোমোজোম অর্জন করে বাবা এবং মা থেকে সেই ক্রোমোজোমের মধ্যে যে জোড়া ক্রোমোজোম চোখের দৃষ্টির জন্য নির্ধারিত তার যেকোনো একটি ত্রুটিযুক্ত থাকে বলে এই রোগটি হয়।

এই রোগটি প্রায় ২০/২৫ বছর আগে পরিচিতি লাভ করে। তখন থেকে বিভিন্ন গবেষণা হলেও অদ্যাবধি এর কোনো চিকিৎসা নেই বলেই চক্ষুবিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে একটি চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কিউবার রাজধানী হাভানায় এই রোগের চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। জানা যায়  প্রফেসর ডা. অরফেলিও পিলাইজ মোলিনা নামক একজন চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ এই রোগের চিকিৎসা আবিষ্কার করেন।

কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল  ক্যাস্ট্রো এই  গবেষণাকে ১৯৮৯ সনে পরিচিত করেন। সেই থেকে এ রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ২৬ বছরেরও অধিক সময় ধরে এই জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, মেকিউলার ডিজেনারেশনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এক আশার আলো সৃষ্টি করে  আসছে। অথচ তা আমাদের অনেকেরই অজানা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা বেশ কয়েক বছর যাবত চোখের  চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ক্ষয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তি কিছুটা হলেও ফেরত পাচ্ছেন। এ চিকিৎসার পর রেটিনার ক্ষয়রোধ ৯৪-৯৬% রোধ হচ্ছে অর্থ্যাৎ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি না যতটুকু হচ্ছে তার থেকে বড় প্রাপ্তি হল রেটিনার পরবর্তী ক্ষয়রোধ হচ্ছে।

চিকিৎসাটি প্রধানত তিন ধাপে দেওয়া হয়। প্রথম ধাপে চোখে অস্ত্রোপচার করে চোখের পাশের জায়গা থেকে living fatty tissue রেটিনার অভ্যন্তরে দেওয়া হয়। এতে করে রেটিনায় কোন জীবিত cell inactive অবস্থায় থাকলে তা active হয়। ফলে রেটিনার ক্ষতিগ্রস্ত cell পুর্নগঠিত হয়ে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। দ্বিতীয় ধাপে ওজন থেরাপি। এ পদ্ধতিতে ওজন গ্যাস (O3) তাৎক্ষণিকভাবে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করে রোগীর শরীরে রক্তে প্রয়োগ অথবা রেক্টাল বা এনাল সাপোজিটরির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এর ফলে রেটিনাতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় ধাপে চোখে ইলেক্টোস্টিমিউলেশন দেওয়া হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ইলেক্টো ম্যাগনেটিক স্টিমিউলেশনের ফলে প্রদানকৃত ওজোন গ্যাস গতিশীল হয় এবং চোখে রক্ত সঞ্চালনের গতি বৃদ্ধি পায়।

এই দুটি থেরাপি প্রতিদিন  একবার করে মোট ১৪ দিন প্রদান করা হয়। এই চিকিৎসা যারাই গ্রহণ করেছে তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টিশক্তি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। অপারেশন ছাড়া থেরাপি দুটি বছরে একবার করে নিতে হয় এবং এর ফলে ক্রমান্বয়ে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে বলে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের জানিয়েছে। যে রোগের চিকিৎসা নেই বলে বিশ্বের সব চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞগণের ধারণা, তাদের সব ধারণা পাল্টে দিয়ে কিউবার হাভানা প্রদত্ত চিকিৎসাটি নিঃসন্দেহে রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, মেকিউলার ডিজেনারেশন এবং গ্লুকোমায় আক্রান্তদের জন্য  এক বিরাট  আশার আলো সঞ্চার করবে।
                                    
লেখিকা
অতিরিক্ত সচিব
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ
(বৈদেশিক সাহায্য বাজেট ও হিসাব শাখা)
অর্থ মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।