ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

প্রমোদভবন থেকে যাদুঘর

রিফাত রাজ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
প্রমোদভবন থেকে যাদুঘর ছবি: সংগৃহীত

বেশি দিন আগের কথা নয়। কালের পরিক্রমায় প্রমোদভবনটির নামকরণ করা হয় আহসান মঞ্জিল।

যার অবস্থান পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ১৯৮৫ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের এক নির্দেশে এটিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।

বর্তমানে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রতিনিয়ত দেশি বিদেশি হাজারো দর্শনার্থীর আগমনে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো জাদুঘর এলাকা।

কিন্তু প্রমোদভবনটি কিভাবে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে রূপান্তরিত হল, তার পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। অষ্টাদশ শতাব্দীতে জমিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরে তার ছেলে শেখ মুতিউল্লাহ এটিকে এক সময় ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন।   বণিকরা এটিকে বাণিজ্য
কুঠি হিসেবে ব্যবহার করতেন।

খাজা আলীমুল্লাহ ১৮৩৫ সালে প্রমোদভবনটি কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন। ওই সময় মহলে তিনি একটি ঘড়ি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, ঘড়িটি কখনো ঠিক সময় দিত না। পরবর্তীতে ১৮৭২ সালে প্রমোদভবনটি সংস্কার করে তার ছেলে খাজা আহসানউল্লার নামানুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। খাজা আলীমুল্লার পরিবার নবাব পরিবার নামে সমধিক পরিচিত।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী। নদীর দিকেই রয়েছে ভবনটির বারান্দা ও সিঁড়ি। সেঁই সিড়ি দিয়ে সরাসরি ভবনটির দ্বিতীয় তলায় উঠা যায়। কিন্তু সিঁড়িটি তিন খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথে গিয়ে শেষ হয়েছে। ভবনটির পূর্ব দিকের ফটকটি প্রধান ফটক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিলের ওপরতলার পূর্বদিকে বৈঠকখানা, লাইব্রেরি ও অতিথিদের জন্য তিনটি কক্ষ রয়েছে। পশ্চিমদিকে রয়েছে নবাবদের শোয়ার ঘর ও বলনাচের ঘর। নিচের তলায় সমপরিমাণ কক্ষ, পূর্বদিকে খাবার ঘর আর পশ্চিম দিকে বিখ্যাত দরবার হল।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে নবাব পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে মোট ২৩/২৪ টি গ্যালারি রয়েছে। গ্যালারিতে- আহসান মঞ্জিল পরিচিতি, ভবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সংস্কারপূর্ব ও পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন আলোকচিত্র, ঐতিহাসিক ঘটনা,  নবাব পরিবারের সদস্যদের ভোজনালয়, ঢাল-তরবারি, অপূর্ব নিমার্ণশৈলীর প্রধান সিঁড়িঘর, নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের বড় একটি তৈলচিত্র, বিলিয়ার্ড কক্ষ, ৯৪ লকারবিশিষ্ট সিন্দুক, নবাব পরিবারের বংশ পরিচিতি চিত্র,  নবাব পরিবারের ঘনিষ্ঠ লেখক-গবেষকদের প্রতিকৃতি, নবাব সলিমুল্লার আলোকচিত্রসহ তার ব্যবহৃত অলঙ্কৃত চেয়ার, হুক্কা, তরবারি ও লৌহখাপ রয়েছে।

নবাবদের তাসখেলার ঘর, বিশিষ্ট ও রাজকীয় অতিথিদের বিশ্রামের জন্য স্টেট বেডরুম, বিদ্যু‍ৎ ব্যবস্থার বিবিধ নিদর্শন, প্রাসাদ ড্রইংরুম, গোলাঘর, নাচঘর রয়েছে।

বঙ্গ ভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকা পূর্ব বাংলার রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হলে সেই সময় নওয়াব সলিমুল্লাহ বাহাদুরের সম্মানিত অতিথি হিসেবে গর্ভনর জেনারেল লর্ড কার্জন এই প্রমোদভবনে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন বলে যানা যায়।

ঊনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত ঢাকায় তো বটেই, পূর্ববঙ্গেও প্রভাব বিস্তার করেছিল আহসান মঞ্জিল। নবাব পরিবারের
আভিজাত্য ও প্রভাবের প্রতীক ছিল এই প্রাসাদ।

রিফাত রাজ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।