ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

মুক্তমত

স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অপশক্তিকে রুখতে হবে

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫
স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অপশক্তিকে রুখতে হবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

স্বাধীনতা মানুষের সবচেয়ে কাঙিখত বিষয়। কেননা, স্বাধীনতাই মানুষকে উন্নততর জীবন দান করে।

আর স্বাধীন পরিবেশেই মানুষের জীবন হয় আনন্দময়। তাই মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হতে জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। এই প্রত্যাশাতেই আমাদের দেশের মানুষও দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

১৯৭১ সালের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনবাজি রেখে আপামর জনতা অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, আর ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। কিন্তু এত বছর পরও কী সেই স্বাধীনতাকে আমরা অর্থবহ করে তুলতে পেরেছি? না, আমরা পারিনি। কেননা, এতো বছর পরও সেই ৭১ র স্বাধীনতা বিরোধীচক্র আজও আমাদের সমাজে সক্রিয়।

আজ ২০১৫ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার ৪৫তম দিবস উদযাপন করছি ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তানিদের মতো আজো স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশের উন্নয়নের গতিকে নানা ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। ব্যাহত করছে দেশের অগ্রযাত্রা।

রাজনীতির নামে ওরা করছে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করছে পেট্রোল বোমায়, না হয় ধারালো অস্ত্রের ছুরিকাঘাতে। শুধু তাই নয়, মানুষের রক্তে গড়ে উঠা সেই গণতন্ত্রকে তারা হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

গত প্রায় তিন মাস ধরে ওদের টানা হরতাল-অবরোধে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া সব কিছুই বন্ধ। বোমা-পেট্রোলের আগুনে জ্বলছে যানবাহন, পুড়ছে সম্পদ, বোমায় ঝলসে হতাহত হচ্ছে শত শত মানুষ। চলছে দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ। এরপরও কী থামছে ওদের এই খেলা?

অতীতেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, কীভাবে রাষ্ট্র যন্ত্রের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে  জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আতাঁত করেছিলেন, কীভাবে তিনি স্বাধীনতা বিরোধী গোলাম আযমকে দেশে আসার সুযোগ দেন এবং পরে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী এবং জয়পুরহাটের রাজাকার আব্দুল আলিমকে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি রাজনীতিতে দুর্নীতি আমদানি করে খাঁটি রাজনীতিকে কলুষিত করেন।

অতীতে বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের সদস্য অথবা চার জাতীয় নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করে দেয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। কারণ এই দলটির গ্রাম বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত।

আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে একাধিকবার। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর তাঁর বেঁচে যাওয়াটা ছিল অলৌকিক। ফলে স্বাধীনতাকে প্রকৃত অর্থে অর্থবহ করতে হলে এই অপশক্তিকে রুখতে হবে। রুখতে হবে এদের অপকর্ম-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য। তবেই আশা করা যায়- স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ ভোগ করতে পারবে এদেশের ১৬ কোটি মানুষ।

আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। ফলে সাম্প্রতিককালে নারী ও কন্যা শিশুদের সাক্ষরতা ও শিক্ষা প্রসারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তির বৃক্ষ’(ট্রি অব পিস) স্মারক উপহার দিয়েছে ইউনেস্কো।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের ‘সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড’এ ভূষিত হয়েছেন তিনি।
 
অ্যাওয়ার্ডের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের সময় বাংলাদেশে তৃণমূলে তথ্য প্রযুক্তি প্রসার, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন, সর্ব সাধারণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সমাজে অবহেলিত মানুষের জীবনধারার মানোন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে অগ্রগতি এবং সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপনের জন্য এ ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড পাবার যোগ্যতা অর্জন করেন শেখ হাসিনা। ’

এদিকে গত বছর বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী লিন ফেদারস্টোন নারীর ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর দায়িত্ব পালন বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্যেই অনুকরণীয় হতে পারে।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য সবচেয়ে আত্মতৃপ্তির বিষয় হলো যে- কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ৠাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন পদে আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট পদে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন।

সিপিএ ও আইপিইউতে বিজয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তার একটি বিরাট বড় প্রমাণও বটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত থাকার কারণে এই বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর যৌথ ফোরামের শীর্ষ পদে এখন বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব নেতারা গুরুভার অর্পণ করেছে বাংলাদেশের কাছে।

সারাবিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে কাজ করছে এখন এই দেশ।

ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রতিটি সংসদের প্রতিনিধিত্ব করছে। এ আমাদের বিরল অর্জন।

এ কথা আমাদের সবার জানা, এর আগে এই বাংলাদেশকে তিন তিনবার কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ হারাতে হয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন এবং ’৮২ সালে সামরিক শাসন জারির পর এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা জারির কারণে সিপিএ আমাদের সদস্যপদ স্থগিত করেছিল। যে বাংলাদেশ সামরিক শাসনের কারণে তিনবার সদস্যপদ হারিয়েছিল, সেই বাংলাদেশ এখন সিপিএ’র নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে একসঙ্গে দুটি বিশ্ব সংস্থায় বিজয়ী হওয়া একটি ইতিহাস ও বিরল ঘটনা।

ফলে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে দেশ-বিদেশে অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ষড়যন্ত্র ও বৈরি পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের মানুষ সাহসের সঙ্গে নির্বাচনে ভোট দিয়ে গণতন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস ও সমর্থন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের ওপর ছিল বলেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করতে সফল হয়েছিল। এই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা আমাদের যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে।

৫ জানুয়ারির বৈধ নির্বাচনকে অবৈধ বলে বিতর্কিত করতে যারা বিদেশে প্রতিনিধি পাঠিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে, বিশ্বের দুটি সংস্থায় বিজয়ের মাধ্যমে তাদের মুখে চুনকালি পড়েছে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পৃথিবীর সব দেশ এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে বলেই এমন বিজয় এসেছে। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে আর কারোর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। সেই সাথে মধ্যবর্তী নির্বাচনেরও কোনো প্রশ্ন আসে না।

গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, শত চক্রান্ত সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলেই বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে ভোট দিয়েছে। গোপন ভোটে বিশ্বের ১৮৮টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যাঁরা বিতর্ক তুলে গণতন্ত্রের নৌকা ফুটো করতে চান, তারা এক সময় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেই। ইতোমধ্যে এর লক্ষ্ণ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, এর ফলে জাতি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে নির্দিষ্ট পথে এগুনোর সুযোগ পেয়েছে।

'৭৫ এর মহাসুনামির তরঙ্গমালা থেকে মহান আল্লাহর পরম করুণায় বেঁচে থেকে জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হান্নান, উদ্দিন সরকার, বিডিআর বিদ্রোহ, জামায়াত-হেফাজত, ৫ জানুয়ারিসহ বিংশ ও একাবিংশ শতাব্দীর আরও অনেক ঝড়-ঝাপটা ও ঢেউ পেরিয়ে প্রশান্ত নদীর মাঝ দিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে পড়ন্ত বিকালে বয়ে চলা একটি পালতোলা নৌকার মতো বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার আজ কেন্দ্রবিন্দুর সৌন্দর্য্য হয়ে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। যার আত্মমর্যাদা, স্বপ্ন, বিশ্বাস, সাহস আর প্রত্যয় হিমালয়সম উঁচু।

ফলে এই বিশাল অগ্রগতিতে বাংলার মানুষ আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর ইতিবাচক মনোভাব আর কার্যকর পদক্ষেপের কারণেই আজ বিশ্বের দরবারে এক মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ জায়গা করে নিতে পেরেছে। তাঁর নেতৃত্বেই আগামী দিনে বাংলার মানুষ বিশ্বের দরবারে তাদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করবে এমনটিই প্রত্যাশা সবার। মানবসেবায় মহান আল্লাহ পাক তাঁকে দীর্ঘায়ু দান করুন।

উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে তাঁর নেতৃত্বেই ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পারবো আমরা। এরপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রাখবো স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগের জন্য একটা দীর্ঘ মেয়াদী রোডম্যাপ তৈরি করার জন্য। যেন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আর কোনো দিন মাথা চাড়া দিয়ে দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত না করতে পারে।   

সবশেষে আমি বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
লেখক: সাবেক মেয়র, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।